বর্তমানে সমস্ত কিছুর বাজার দর অত্যন্ত চড়া। ফলে সংসার খরচ অনেকটা বেড়েছে। যদিও সাধারণ মানুষের আয় বা বেতন ততটাও বাড়েনি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারছেন না। কিন্তু নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে অবশ্যই আপনাকে সঞ্চয় করতে পারতে হবে। এর জন্য কতগুলি অভ্যাস শুরু থেকে গড়ে তুলতে হবে নিজের মধ্যে। আর তাহলেই অল্প অল্প করে প্রতি মাসে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। যেটা দীর্ঘমেয়াদে গিয়ে একটা বড় পরিমাণ হয়ে উঠবে।
যাদের আয় ততটা বেশি নয় তারা সংসার খরচ সামলে সঞ্চয় করতে গিয়ে ধাক্কা খান। ফলে এমন মানুষেরা বেশিরভাগ সময়ই ভাবেন, আরেকটু আয় বাড়লে সঞ্চয় শুরু করবেন। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন সেটা আর হয়ে ওঠে না। কারণ আপনার আয় যতদিনে বাড়বে ততদিনে খরচও অনেকটা বেড়ে যাবে। ফলে আয় বাড়লে সঞ্চয় করবেন এই মানসিকতাকে যদি প্রশ্রয় দেন তাহলে আর কোনওভাবেই সঞ্চয় করা হয়ে ওঠা যাবে না। তাই আমাদের পরামর্শ, আয় যতই কম হোক গোড়া থেকেই অল্প কিছুটা হলেও সঞ্চয় করা শুরু করুন।
ধরুন কেউ মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করেন বা বেতন পান। আজকের বাজার দরে এটা তেমন কিছুই নয়। তবে ভারতের বেশিরভাগ চাকুরিজীবীরা এরই আশেপাশে বেতন পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করার মুখে এটাই মোটামুটি একটা মান্য বেতন কাঠামো এই দেশে। এবার যিনি ২০ হাজার টাকা বেতন পান তিনি যে হঠাৎই মাসে মাসে অনেকটা বেশি করে টাকা জমাতে পারবেন এমন নয়। এক্ষেত্রে ১০ পার্সেন্ট রুল ফলো করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ ৫০০ বা ৮০০ টাকা নয়, এবার ১ টাকাও না নিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার দেবে সরকার
অর্থাৎ যিনি ২০ হাজার টাকা বেতন পান তাঁর উচিত যতই প্রয়োজন থাক না কেন তার থেকে ১০ শতাংশ অর্থ অর্থাৎ ২,০০০ টাকা আলাদা করে সরিয়ে রাখা। এটাই আপনার সঞ্চয় হবে। এবার এই দুই হাজার টাকা নিজের বর্তমান সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখলে বা কাছে রেখে দিলে কোনওদিনই জমাতে পারবেন না।
এর জন্য এমন একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলুন যেটার সঙ্গে UPI সংযোগ করা নেই। পারলে ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এটিএম কার্ডও রাখবেন না। ফলে যেদিনই আপনার অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা ঢুকবে সেদিনই সেখান থেকে ২,০০০ টাকা ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবেন। এইভাবেই দেখবেন ধীরে ধীরে বেশ অনেকটা সঞ্চয় গড়ে উঠেছে।
এবার বেতন বেড়ে ৩০ হাজার টাকা হলে ৩০ পার্সেন্ট রুল ফলো করা উচিত। অর্থাৎ আয়ের ৩০ শতাংশ অর্থ সঞ্চয় করবেন দেখুন নিজের অবসর জীবন বা ভবিষ্যতে বড় প্রয়োজন হলে কাজে লাগবে। সেই কথা ভেবেই তো মানুষ অর্থ সঞ্চয় করে।
কম রোজগারের সময় আপনি বেশি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন না। কিন্তু ৩০ হাজার টাকার আশেপাশে আয় হলে অবশ্যই আপনার নিজের বেতনের ৩০ শতাংশ অর্থ সঞ্চয় করা উচিত। অর্থাৎ বেতন থেকে ৯,০০০ টাকা প্রতি মাসে ওই আলাদা করে রাখা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিন। এইভাবে চললেই দেখবেন আপনি বছরে এক লক্ষ টাকারও বেশি সঞ্চয় করে ফেলেছেন।
আরো পড়ুনঃ ১৮,০০০ টাকা প্রতি মাসে সবাইকে দেবে সরকার! দিলে তো ভালোই হয়, কিন্তু সত্যিই কি?
সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে শুধুই যদি অপর একটি অ্যাকাউন্টে ক্যাশ টাকা জমাতে থাকেন সেটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। একটু পড়াশোনা করে এই সঞ্চয়ের একাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে, কিছু টাকা ফিক্সড ডিপোজিট, কিছু টাকা জীবন বিমা ইত্যাদিতে ভাগ করে রাখুন। তাহলে দেখবেন আপনি যখন রিটায়ার করছেন তখন অনেক টাকা এইগুলো থেকে আপনার হাতে চলে আসবে। ফলে অবসর পরবর্তী জীবন নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না।