মমতা সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল দেদার বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের হাটে। নীল রঙের সাইকেল, সামনে ব্যাগ-বই খাতা রাখার জন্য কালো রঙের বাকেট এবং তার সামনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘বিশ্ব-বাংলা’ লোগো দেওয়া সবুজ সাথী সাইকেলের এই চিরাচরিত মডেলের সঙ্গে বাংলার সকল মানুষই অতি পরিচিত।
শহর থেকে গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় স্কুল পড়ুয়াদের বিনামূল্যে এই সবুজ সাথীর সাইকেল দিয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই সাইকেল বাংলাদেশের পুরনো জিনিসপত্র কেনা বেচার হাটে ৭,০০০-৮,০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে!
চমকে ওঠার মত এই খবর নিয়ে অনেকেই কিছুদিন ধরে সংশয় প্রকাশ করছিলেন। যদিও এইরম একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে ভাইরাল হয়। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সংলগ্ন বাংলাদেশের যে সকল পুরনো জিনিস কেনাবেচার হাট আছে সেগুলোয় ব্যাপক চাহিদা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেলের।
অল্প ব্যবহৃত বা একেবারে নতুন সাইকেলগুলো চোরা পথে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর সেই সাইকেলই ওপার বাংলার সাধারণ মানুষ মুড়ি-মুড়কির মত কিনে নিচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ আগে মিলত ২০০ টাকা এখন মিলবে ৩০০ টাকা! এই গ্যাস সিলিন্ডারে পাবেন সুবিধা
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ঠিক একই গুণমানের, একই সাইজের সাইকেলের দাম বাংলাদেশের বাজারগুলোয় স্থানভেদে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পড়ে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের সবুজ সাথী সাইকেল চোরা পথে প্রতিবেশী দেশটিতে পৌঁছে যাচ্ছে। আর তা পুরনো জিনিস কেনাবেচার বাজারে সাইকেল প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দামে। প্রায় অর্ধেক দামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুদান হিসেবে দেওয়া সাইকেল পেয়ে তা দেদার কিনছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
জানা গিয়েছে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, পাবনা, চাঁপাই-নবাবগঞ্জ, রানিহাটি ইত্যাদি এলাকার পুরনো জিনিসপত্র কেনার বড় বাজারগুলিতে মূলত বিক্রি হচ্ছে সবুজসাথী প্রকল্পের এই সাইকেল। যে খুচরা বিক্রেতারা এই সাইকেল বিক্রি করছেন তাঁরা অনেকেই জানেন না কোথা থেকে এই সাইকেল এসেছে।
আরো পড়ুনঃ 4% DA-এর পর সরকারি কর্মীরা পাবে ১২,৬০০ টাকা! কীসের জন্য দেওয়া হবে এই টাকা?
তবে বাংলাদেশের যে ব্যবসায়ীরা পুরনো জিনিসের পাইকারি কারবার করেন তাঁরা গোটা বিষয়টি সম্বন্ধে রীতিমত ওয়াকিবহাল। জানা গিয়েছে বিএসএফের চোখে ফাঁকি দিয়ে বাংলার সরকারি সাইকেল ঘুরপথে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশে।
দুটি প্রক্রিয়ায় সবুজ সাথীর সাইকেলের এই চোরাকারবার চলছে। সীমান্তবর্তী এলাকার বহু ভারতীয়র ওপার বাংলায় চাষের জমি আছে। তাঁরা প্রতিদিন বিএসএফের থেকে অনুমতি নিয়ে চাষ করতে চান। এই ব্যক্তিদের অনেকে ছেলে-মেয়ের স্কুলে পাওয়া সবুজ সাথীর সাইকেলে চড়ে ওপার বাংলায় চাষের কাজে যান। তারপর সেখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে ভাল দামে এই সাইকেল বিক্রি করে দেন। পরে বিকেল বেলায় চাষের কাজ সেরে ভারতে ফিরে আসার সময় খালি পায়ে হেঁটে আসেন। এই গোটা কাজটাই বিএসএফের চোখে ধুলো দিয়ে চলছে।
আরো পড়ুনঃ আধার কার্ডের এই তথ্য মাত্র ১ বারই আপডেট করতে পারবেন, যা করার তাড়াতাড়ি করুন
তবে মূল যে উপায়ে কাজটা হচ্ছে তা হল সীমান্তবর্তী এলাকার কালভার্টগুলোর মধ্য দিয়ে বাকি জিনিসের চোরাই কারবারের মতই ওপার বাংলায় পাচার হয়ে যাচ্ছে সবুজ সাথীর সাইকেল। কিন্তু কীভাবে লট লট সবুজ সাথীর সাইকেল এপার থেকে ওপার বাংলায় চলে যাচ্ছে সে বিষয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। উল্লেখ্য, সবুজ সাথীর সাইকেলের গুণমান নিয়ে বারবার পশ্চিমবঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ অর্ধেক দামে এই সাইকেল পাওয়ায় বেশ খুশি।