বাংলার ইতিহাসে এই প্রথম। রাতারাতি চাকরি চলে গেল ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে যারা চাকরি পেয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে সেই প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, ওই প্যানেলের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের একাংশকে এক মাসের মধ্যে ১২% সুদ সহ বেতনের টাকা ফেরতের নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট।
লোকসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের চাকরি বাতিলের এই নির্দেশ ব্যাপক ঝড় তুলেছে বাংলায়। সত্যি বলতে গত কয়েক বছর ধরে নিয়োগ দুর্নীতি বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলের নিয়োগ অর্থাৎ টেট দুর্নীতির মামলা সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। অপরদিকে এই এসএসসি দুর্নীতির মামলা একসময় সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে ছিল। তিনি গোটা প্যানেলটাই বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন: লাইসেন্স ছাড়াই এই গাড়িগুলো চালাতে পারবেন! ২ চাকা, এমনকি ৪ চাকাও
যদিও শিক্ষকদের একাংশ সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যান। সেখানে একই রায় বহাল থাকলে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁরা জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সবপক্ষের মতামত না শুনেই রায় দিয়েছেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাটি আবারও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠায়।
সর্বোচ্চ আদালত মে মাসের মধ্যে এসএসসি দুর্নীতির মামলার শুনানি শেষ করে রায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সময়সীমার মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বর রশিদির বেঞ্চ সোমবার এই মামলার রায়দান করল।
এসএসসি দুর্নীতি মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালত প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৬ সালের যে প্যানেলের ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছিল সেই গোটা প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এসএসসি যাদের নিয়োগ করেছিল তাঁদেরকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সুদ সহ এতদিনের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বছরে ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতিরা।
আরো পড়ুন: পিএম কিষানের ১৭ তম কিস্তির টাকা ঢুকবে না, যদি এই কাজটি না করা হয়
লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া চলার মধ্যে এসএসসি দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বিরাট ধাক্কা বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা টাকার বিনিময়ে অযোগ্য অনেককে এসএসসির মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগের একাংশ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।
এদিকে আদালত সিবিআইকে এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি জানিয়েছে যারা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছিল সেই সকল ব্যক্তিদের চাইলেই হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই। এমনকি অতিরিক্ত পদ তৈরি করে পরিস্থিতির। সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও সিবিআই কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে আদালত জানিয়েছে।
এদিকে এসএসসি দুর্নীতি মামলার এই চাঞ্চল্যকর রায় বের হওয়ার পরই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফার দাবী জানিয়েছেন। অপরদিকে সিপিএমের পক্ষ থেকে যে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি চলে গেল তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শাসক দলের যে নেতারা টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি করেছিলেন তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বামেরা ।
আরো পড়ুন: 4% DA-এর পর সরকারি কর্মীরা পাবে ১২,৬০০ টাকা! কীসের জন্য দেওয়া হবে এই টাকা?
এদিকে এসএসসি জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মত বেআইনি নিয়োগ ছিল। কিন্তু তাদের জন্য বাকি যোগ্যদের বঞ্চিত করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তারা সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে।