একসময় ভারতের সবথেকে জনপ্রিয় টেলিকম সংস্থা ছিল ভোডাফোন আইডিয়া (Vi)। তবে যেন তাদের ব্যবসা ফিকে হয়ে আসছে। ঝুলিতে ১.৯৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা পড়ে রয়েছে। আর হাতে নগদের অভাব। আর এই সংস্থার তরফ থেকে এবার সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকার যদি পুরোপুরি পাশে না থাকে, তাহলে ২০২৬ সালের মার্চ মাসের পর আর পরিষেবা চালানো সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে।
আর এই ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই ২১ কোটির বেশি গ্রাহক চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। তাদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, আমাদের সিমটি কি আর চলবে? আমরা আমাদের নম্বরটা কী করব? আর এখন সবথেকে বড় বিষয়, বর্তমানে যেটুকু পরিষেবা তারা চালাতে পারছে, তাও কি এবার বন্ধ হয়ে যাবে?
কেন হল এরকম পরিস্থিতি?
গত কয়েক বছর ধরেই ভোডাফোন আইডিয়ার ব্যবসার একেবারে টালমাটাল অবস্থা। কোনও বিনিয়োগ নেই, আর্থিক সাহায্য নেই, নতুন কোনও প্রযুক্তি স্থাপনেও ব্যর্থ হচ্ছিল তারা। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও কিছুটা সাহায্য করা হয়েছিল, তবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা মাফ করে সংস্থার ৪৯% অংশীদারিত্ব কিনে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। তবুও এখনো ১.১৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ বাকি রয়েছে, যা Vi-কে শোধ করতে হবে।
আর সম্প্রতি ভোডাফোন আইডিয়া সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে যে, আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া মাফ করে দেওয়ার। কিন্তু সেখানেও রয়েছে অনিশ্চয়তা। আর এবার সংস্থাটি দাবি করছে, এই পরিস্থিতিতে একমাত্র বিকল্প হল দেউলিয়া আদালতে যাওয়া। তবে সেই পথে গেলে পরিষেবার রক্ষা করাও প্রায় অসম্ভব।
গ্রাহক হারানোর সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে
গত দশ মাসে ভোডাফোন আইডিয়া তাদের ১.২৫ কোটির বেশি গ্রাহক হারিয়ে ফেলেছে। আর TRAI-এর এক তথ্য অনুযায়ী, জুলাই, ২০২৪ থেকে মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ লক্ষ গ্রাহক অন্য অপারেটরের শিফট হয়ে গিয়েছে। পরিষেবার মন খারাপ হওয়ার কারণে এই অবস্থা Vi-র। হ্যাঁ, এমনটাই অভিযোগ করছে সবাই।
আর এক সময় ভোডাফোন আইডিয়ার শেয়ার ছিল ১৮.৫২ টাকা। আর বর্তমানে সেই শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৩৭ টাকায়। আর এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা পড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: সেরার সেরা অফার নিয়ে আসলো জিও! ২৯৯ টাকার প্ল্যান এবার মিলছে ১০০ টাকায়
সরকার কি তাহলে ভোডাফোন আইডিয়ার পাশে দাঁড়াবে?
ভোডাফোন আইডিয়া জানিয়েছে, সরকারের নির্দেশ ছাড়া ব্যাংকগুলি আর্থিক সাহায্য দিতে চাইছে না। ফলে সরকার যদি নতুন করে অংশীদারিত্ব নিয়ে সমস্ত বকেয়া মাফ না করে, তাহলে Vi-কে বাঁচানো প্রায় দুষ্কর হয়ে পড়বে।
আর টেলিকম বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, ভোডাফোন আইডিয়া বন্ধ হয়ে গেলে বাজারে প্রতিযোগিতা কমে যাবে। দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের গতিও অনেকটা কমে যাবে বলেই অনেকে মনে করছে। পাশাপাশি গ্রামীণ ভারতে বহু মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবে। এখন দেখার ভোডাফোন আইডিআর ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।