অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সাত পাক না ঘুরলে হিন্দু বিবাহ বৈধ নয়, একটি বিবাহ বিচ্ছেদ মামলার রায় দিতে গিয়ে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, শুধুমাত্র আইন মেনে রেজিস্ট্রি করলেই হিন্দু বিবাহ বৈধ হয়ে যায় না। হিন্দু বিবাহ আইনের আওতায় বিয়ে করতে হলে সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় রীতি এবং আচারগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হবে। তবেই সংশ্লিষ্ট দম্পতির বিবাহ বৈধ বলে বিবেচিত হবে।
এক পাইলট (বিমান চালক) দম্পতি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারত্ন ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনে ওই পাইলট দম্পতির উভয়েই জানান, তাঁরা হিন্দু বিবাহ আইন মেনে বিয়ে করেছিলেন। একইসঙ্গে স্বীকার করে নেন, বিবাহ উপলক্ষে সঙ্গীত, নাচ, প্রীতি ভোজের মত জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও ধর্মীয় রীতিনীতি সেভাবে মানা হয়নি।
হিন্দু ধর্মীয় রীতি সঠিকভাবে না মেনেই হিন্দু বিবাহ আইনে বিয়ে করার বিষয়টি জেনেই আবেদনকারী যুবক ও যুবতীকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন দুই বিচারপতি। সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হিন্দু বিবাহ কোনও নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া, যৌতুকের আসর নয়। এটি ভারতীয় সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ধর্মীয় রীতি। হিন্দু বিবাহ আইনের আওতায় বিয়ে করতে হলে ধর্মীয় রীতিনীতিকে যথোপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে এবং তা মেনে বিয়ে করতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্নি সাক্ষী রেখে নবদম্পতির সাতপাকে ঘোরা না হলে বিবাহ সম্পূর্ণ হবে না।
আরো পড়ুনঃ মে মাসে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা কবে ঢুকবে? এইভাবে পেমেন্ট চেক করে দেখুন
বিচারপতিরা জানান, সব ধর্মীয় নিয়মকানুন না মেনে হিন্দু বিবাহ আইনের আওতায় শুধুমাত্র রেজিস্ট্রি করে নিলে তা বৈধ নয়। প্রয়োজনে পরে সেই রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিতে পারে বিচার বিভাগ।
হিন্দু বিবাহের রীতির সঙ্গে ভারতবর্ষের মানুষের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও আত্মিক বোঝাপড়া জড়িয়ে আছে বলে সর্বোচ্চ আদালত মন্তব্য করেছে। উল্লেখ্য ১৯৫৫ সালে এই হিন্দু বিবাহ আইন প্রচলিত হয়। এই আইনের আওতায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি লিঙ্গায়েত, জৈন, শিখ প্রভৃতি অন্যান্য ধর্মের মানুষরাও হিন্দু বিবাহ আইন মেনে বিয়ে করে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ মা-বাবাকে বোকা বানিয়ে স্কুল ফাঁকির দিন শেষ! স্কুলে স্কুলে নতুন নিয়ম
এছাড়াও ভারতে মুসলিম বিবাহ আইন এবং স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট প্রচলিত। দুটি অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে বিবাহ হলে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিবাহ করা হয়। তবে চাইলে একই ধর্মের নারী ও পুরুষ স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টেও বিয়ে করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতিনীতি মানার জটিলতা থাকবে না।