পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজস্ব উদ্যোগে আবাস যোজনা প্রকল্প চালু করে প্রায় ১২ লক্ষ উপভোক্তার ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গ্রাহকদের সুখবরের সামনে এসেছে একটি বড় সমস্যা। তা হল বালির দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায় বাড়ির কাছ থমকে গেছে অনেক গ্রাহকের। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক আজকের এই প্রতিবেদনে।
কেন সমস্যায় পড়লেন গ্রাহকরা?
আবাস যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তারা সরকারের তরফে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকে পেয়ে বাড়ি তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার ৭৯,৩০৯ জন উপভোক্তার মধ্যে ইতিমধ্যে ৭৫,০০০ জন এই টাকা পেয়েছেন। তবে সমস্যা হল বাড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বালির দাম ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
গ্রাহকদের দাবি অনুযায়ী-
- প্রশাসন প্রতি ঘনফুট বালির দাম ২১ টাকা নির্ধারণ করেছে।
- কিন্তু বাজারে প্রতি ঘনফুট বালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা করে।
ফলে বালির এই বেশি দামে বাড়ি তৈরির খরচ এতটাই বেড়ে গেছে যে, ৬০,০০০/- টাকার একটা বড় অংশ কেবল বালি কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
দ্রুত বাড়ি তৈরি না হলে কি হবে?
বালির দাম বেশি হয়ে যাওয়ার জন্য সমস্যাটি এখন আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। কারণ-
- রাজ্য সরকার ঘোষণা করে দিয়েছে প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বাড়ি তৈরীর কাজ শেষ করতে হবে।
- প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ না হলে দ্বিতীয় কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে না।
বালির আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে অনেকেই প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে পারছে না। তাই অনেক গ্রাহক এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
বালির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন এবং বালিঘাটের ইজারাদারদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-
- প্রশাসন আশ্বাস দিয়ে দিয়েছে, প্রতি ঘনফুট বালির দাম ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে রাখা হবে।
- প্রতিটি উপভোক্তা ৬০০ ঘনফুট বালি কিনতে পারবেন।
বিডিও মৈত্রী ভৌমিক বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যাতে উপভোক্তারা সঠিক দামে বালি পান এবং কাজ শুরু করতে পারেন।
ইজারাদারদের দাবি
বালিঘাটের ইজারাদারদের একাংশ দাবি জানিয়েছেন-
- ৪০ হেক্টর অঞ্চল থেকে ৫ বছর বালি তুলতে ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়।
- এর সঙ্গে রাজস্ব এবং অন্যান্য খরচও যুক্ত করা হয়।
- এই কারণগুলোর জন্যই বাড়ির দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
ট্রাক্টর চালকরা জানাচ্ছেন, প্রশাসনের করাকরির কারণে গ্রাহকরা নির্দিষ্ট ইজারাদারদের থেকে বালি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এই কারণেই দাম বেড়ে যাচ্ছে।
গ্রাহকদের ভবিষ্যৎ কি অনিশ্চিত?
বালির দামের এই সমস্যার সমাধান না হলে আবাস যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তারা আরও সমস্যায় পড়তে পারেন। বাড়ি তৈরির সময়সীমা না মানলে সরকারের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে না। এর ফলে বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ থমকে যাবে।
আরও পড়ুন: আবাস যোজনার ৬০০০০ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ, বৃদ্ধ দম্পতির নতুন বাড়ির স্বপ্ন ভেঙে চুরমার
উপভোক্তাদের আবেদন
আবাস যোজনার উপভোক্তারা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে যে, বালির দাম যেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। না হলে তাদের পাকা বাড়িতে তৈরীর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, বালির দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনের তৎপরতা কতটা কার্যকর হবে এখন সেটাই দেখার বিষয়।