পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার পর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছে, যার মধ্যে অন্যতম একটি প্রকল্প হল লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প। এই প্রকল্পটি মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করতে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সাধারণ শ্রেণীর মহিলারা এই প্রকল্পের অধীনে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণীর মহিলারা প্রতি মাসে ১২০০ টাকা ভাতা পান এই প্রকল্পের আওতায়। তবে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই প্রকল্পে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অনেক মহিলার ব্যাংক একাউন্টে আর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ঢুকবে না।
নতুন নিয়ম এবং যোগ্যতার মানদন্ড
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে। এই নিয়মগুলি মেনে চললেই কেবলমাত্র মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। সেই নিয়মগুলি হল-
১. বয়সের সীমা
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে মহিলাদের বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ২৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৬০ বছরের মধ্যে। তবে বয়সের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
২. ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য মহিলাদের নিজের নামে একটি সিঙ্গেল ব্যাংক একাউন্টে থাকতে হবে এবং অবশ্যই সেই ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করা থাকতে হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করা না থাকলে এই প্রকল্পের সুবিধা এবার থেকে আর মিলবে না।
৩. কেওয়াইসি সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক
যেসব মহিলারা এখনো তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কেওয়াইসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি তাদের টাকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আগামী মাস থেকে এই প্রকল্পের টাকা তাদের ব্যাংকে আর ঢুকবে না।
৪. আয়ের উৎসের শর্ত
যারা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন অথবা অন্য কোন পেশা থেকে আয় করেন তারা এবার থেকে আর এই প্রকল্পের যোগ্য নন। পরিবারের কেউ যদি আয়কর দাতা হন তাহলে সেই মহিলারাও এই প্রকল্পের বাইরে পড়বেন।
দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে পুনরায় আবেদন শুরু
যেসব মহিলারা নতুন নিয়ম অনুযায়ী এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে চান এবং সমস্ত শর্ত পূরণ করবেন তারা দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই ক্যাম্প শীঘ্রই চালু করা হবে।
কাদের নাম বাতিল হল?
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প থেকে একাধিক মহিলার নাম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাদের নাম বাতিল হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেগুলি হল-
- যাদের বয়স ২৫ বছরের নিচে বা ৬০ বছরের উপরে তাদের নাম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
- যাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করা নেই তাদের নাম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
- যারা ব্যাংকে কেওয়াইসি জমা দেননি তাদের নাম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
- যাদের পরিবারে কেউ আয়কর দাতা এবং সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন তাদের নামও এই প্রকল্প থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
নতুন নিয়মের প্রভাব
ডিসেম্বর মাসে আরো ৫ লক্ষ মহিলাকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছিল। তবে এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বহু মহিলার নাম বাদ পড়বে। রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নতুন নিয়ম কার্যকর করার ফলে প্রকল্পের স্বচ্ছতা আরো বাড়বে এবং প্রকৃত উপভোক্তাদের কাছেই এই প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছাবে।
আরও পড়ুন: ডিএ না বাড়লেও বাংলার সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় খবর, এবছর মিলবে বাড়তি ছুটি
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প মহিলাদের জন্য একটি বড় আর্থিক সহায়তা হলেও নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পরে অনেক মহিলাকে এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। যারা এখনো এই প্রকল্পে আবেদন করেননি তাদের দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
