দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত মানুষের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে রেশন প্রদান করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ৮০ কোটির বেশি মানুষকে উপকার করেছে। তবে নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রবল আলোচনা শুরু হয়েছে।
ফ্রি রেশন বন্ধের ইঙ্গিত
সম্প্রতি নীতি আয়োগ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে ২৪ কোটি ৮২ লক্ষ মানুষ দরিদ্র সীমা থেকে উঠে এসেছেন। এই তথ্যকে কেন্দ্র করেই বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প বন্ধ করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও এই রিপোর্টের ভিত্তিতে বর্তমানে ৮০ কোটি রেশন সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে ওই ২৪ কোটি ৮২ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রেশন গ্রাহকদের থেকে টাকা নেওয়ার প্রস্তাব
নীতি আয়োগের একটি বৈঠকে রেশন ডিলারের আয়ের বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে প্রস্তাব রাখা হয়েছে যে, গ্রাহকদের থেকে প্রতি কেজি রেশনের পণ্য বাবদ ১ থেকে ১.৫ টাকা নেওয়া হতে পারে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রত্যেক গ্রাহকের থেকে ৫ থেকে ৭ টাকা করে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বর্তমানে রেশন ডিলাররা প্রতি কেজিতে মাত্র ৯০ পয়সা কমিশন পান। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এই কমিশন বৃদ্ধি করা হোক। সরকারের মতে রেশন ডিলারের আয় বৃদ্ধি এবং কোষাগারের চাপ কমানোর জন্য এরকম প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
ফ্রি রেশন চালু রাখার উদ্যোগ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন যে, ১লা জানুয়ারি, ২০২৪ থেকে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। কিন্তু এই প্রকল্পে কেন্দ্রকে প্রতিবছর ১১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়, যা দেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতিতে ফ্রি রেশন প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: রেশন কার্ডের নিয়মে বড় পরিবর্তন, এবার থেকে শুধু নির্দিষ্ট দিনেই মিলবে রেশন
সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব
বিনামূল্যে রেশন দেওয়া বন্ধ হলে এটি সরাসরি দেশের দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের উপর চাপ বাড়াবে। খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল অনেক পরিবারকে অর্থ ব্যয় করে রেশন সংগ্রহ করতে হবে। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে।
বিনামূল্যে রেশন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা ক্রমশই বাড়ছে। রেশন ডিলারদের আয় বৃদ্ধি এবং কোষাগারের চাপ কমাতে সরকারের এরকম প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের বড় অংশের মানুষের উপর তা সরাসরি প্রভাব পড়বে। যদিও সরকার এখনো কোনো রকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি এই বিষয়ে। তবে রেশন গ্রাহকদের এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।