দেশের ৪০ কোটির বেশি মানুষ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। অর্থাৎ এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ‘দিন আনি, দিন খাই’ ভিত্তিতে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হন। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করার বহু অসুবিধা আছে। কর্মজীবনে অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট কর্মী বা শ্রমিককেই বহন করতে হয়।
নিয়োগকারী ESI, EPF-এর মত আবশ্যিক সামাজিক প্রকল্পগুলির সুবিধা দেয় না। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত অবস্থায় কোনও শ্রমিক পঙ্গুত্বের শিকার হলে কর্মক্ষেত্র বিন্দুমাত্র দায়ভার বহন করে না। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার দিক হল, অবসরের পর পেনশন বা আর্থিক নিরাপত্তা কোনও কিছুই দেয় না নিয়োগকারী বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এই বিপদ থেকে দেশের কোটি কোটি অসংগঠিত শ্রমিককে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে এসেছে ই-শ্রম কার্ড (E-Shram Card)।
এর মাধ্যমে ৬০ বছর বয়সের পর একজন অসংগঠিত শ্রমিক কেন্দ্রের কাছ থেকে মাসে মাসে পেনশন পাবেন! পেনশনের টাকাই এবার অ্যাকাউন্টে ঢোকা শুরু হয়েছে। আপনিও কি পেয়েছেন?
ই-শ্রম কার্ডের মাধ্যমে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরতরা সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা, বিমার সুবিধা ও ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে পেনশন পেয়ে থাকেন। তাছাড়া কার্ড দেশের নাগরিকদের অন্যতম পরিচয় পত্র হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আপনি যদি অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত হন তবে নিজের ও পরিবারের ভালর কথা ভেবে অবশ্যই নিম্নলিখিত পদ্ধতি মেনে এই বিশেষ পরিচয় পত্র তৈরি করিয়ে নিন। মাথায় রাখবেন কেবলমাত্র অনলাইনেই ই-শ্রম কার্ড তৈরি করা যায়।
আরো পড়ুন: ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়ানোর দিন শেষ! বাড়ির কাছেই মিলবে এই সুবিধা
ই-শ্রম কার্ডকে কেন এত গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র?
রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডির সঙ্গে আধার নম্বর লিঙ্ক বাধ্যতামূলক করে কেন্দ্রীয় সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে ভারতবাসীর প্রধান পরিচয়পত্র হল আধার। ফলে আধার কার্ড না থাকলে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি, পরীক্ষায় বসা, চাকরি পাওয়া সবকিছুই কঠিন হয়ে উঠবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধে বিশেষত যেগুলি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী ও সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে তার সুবিধে পৌঁছে দিতে বাধ্যতামূলক করতে চলেছে ই-শ্রম (e-Shram) কার্ডকে। এই কার্ডে আপনার নাম নথিভুক্ত থাকলে তবেই PMAY, PMJAY, PM Kisan সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
ই-শ্রম কার্ডে আপনার নাম নথিভুক্ত থাকলে আপনি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী হিসেবে অবসরের পর প্রতি মাসে ১,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন বিমা, আয়ুষ্মান ভারত, কৃষকদের সাহায্য ইত্যাদি পেতে গেলেও ই-শ্রম কার্ডে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ই-শ্রম পোর্টাল খুলেছে।
আরো পড়ুন: ১০ টাকার নোটের অবস্থা খুবই খারাপ! তবুও RBI নিল এই সিদ্ধান্ত
কারা ই-শ্রম কার্ডে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন?
- অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করলে এবং মাসিক আয় আয়কর সীমার নিচে থাকলে তবে ই-শ্রম কার্ডে নাম নথিভুক্ত করা যাবে।
- যারা কর্মচারী ভবিষ্যৎ নীধি (EPF) ও ESI সুবিধা পান না তাঁরাই কেবলমাত্র এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
- ১৬-৫৯ বছরের মধ্যে বয়স হলে তবেই ই-শ্রম কার্ডে নাম নথিভুক্ত করা যাবে।
ই-শ্রম কার্ডের বিশেষ সুবিধাগুলো কী?
- ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে ১,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা করে পেনশন পাওয়ার সুবিধা।
- কর্মরত অবস্থায় কোনও কারণে পঙ্গু হয়ে গেলে বা অঙ্গহানি হলে ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন।
- মারা গেলে পরিবার ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবে।
- শ্রমিকের পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে বই-খাতা বা পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার জন্য বিনামূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়ার মতো সাহায্যও করে সরকার।
- রেশন কার্ডের সঙ্গে ই-শ্রম কার্ড লিঙ্ক করা থাকলে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে বসেও রেশন তুলতে পারবেন।
আরো পড়ুন: বছরে ১০ টা ফ্রি গ্যাস দেবে সরকার, ভোটের আগেই বিরাট ঘোষনা মুখ্যমন্ত্রীর
ই-শ্রম কার্ডের টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে কিনা কীভাবে জানবেন?
ই-শ্রমকার্ডের অধীনে পেনশনের দুটি কিস্তির টাকা এর আগেই দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার তৃতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আপনি পেলেন কিনা বা আপনার টাকার স্ট্যাটাস কী তা জানার জন্য নিম্নলিখিত উপায় অনুসরণ করুন-
- প্রথমে www.eshram.gov.in -এই ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
- হোমপেজে Payment Status লেখা লিঙ্কের উপর ক্লিক করুন।
- এবার স্ট্যাটাস চেক করার জন্য নিজের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর, আধার নম্বর, UAN নম্বরের মধ্যে যে কোনও একটি দিন এবং Search বাটনে ক্লিক করুন।
- এবার স্ক্রিনে আপনার পেমেন্ট স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন। যদি অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে গিয়ে থাকে তবে ‘Transaction Successful’ মেসেজটি দেখাবে।