CAA আর NRC কি একই? এতে কি কারো নাগরিকত্ব যাওয়ার ভয় আছে?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

সোমবার রাতেই দেশজুড়ে চালু হয়ে গিয়েছে CAA. আর মঙ্গলবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি নির্দিষ্ট পোর্টালে CAA-এর মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনলাইনে আবেদন করতে শুরু করেছেন।

যথারীতি সিএএ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। একে NRC-এর আগের ধাপ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কেরল, তামিলনাড়ুর মত রাজ্যগুলি জানিয়ে দিয়েছে তারা CAA কার্যকর করবে না।

অপরদিকে প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে অসম। সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল ডেকেছে ভূমিপুত্ররা। এই আবহে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে চোখ রাখা যাক। CAA এর সঙ্গে NRC-এর সম্পর্ক কতটুকু? এর ফলে কাদের নাগরিকত্ব চলে যেতে পারে? এই প্রতিবেদনে এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরব আমরা।

লোকসভা নির্বাচনে ঠিক আগে CAA চালু করা নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিরাট চাল। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা CAA দেশে ধর্মীয় বিভাজনকে আরও তীব্র করবে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে এটা একেবারে নতুন কোন‌ও বিষয় নয়।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০১৯ সালে সংসদে CAA আইন পাস করেছিল। রাষ্ট্রপতি তাতে সইও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশজোড়া তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন ও পরবর্তীতে করোনা মহামারী এসে যাওয়ায় CAA চালু করার বিষয়ে পিছিয়ে যায় সরকার।

তবে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে সেটি আইন হিসেবে গেজেট নোটিফিকেশন জারি করায় বিতর্ক ব্যাপক মাত্রা ধারণ করেছে। বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যে এই নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। কিন্তু একেকটি রাজ্যে প্রতিবাদের কারণ আলাদা আলাদা। তামিলনাড়ু যেমন শ্রীলঙ্কা থেকে আগত তামিল শরণার্থীদের এই সুযোগ না দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে। আবার বাংলা প্রতিবাদ জানাচ্ছে একে এনআরসির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে তুলে ধরে। অপরদিকে বাম শাসিত কেরলের প্রতিবাদের মূল জায়গাটা হল ধর্মের ভিত্তিতে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

CAA আসলে কী?

২০১৯ সালে সংসদে পাস হওয়া সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে বলা হয়েছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নিপীড়নের শিকার হয়ে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতে আশ্রয় নেবেন, তাঁদের কোনরকম নথিপত্র ছাড়াই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নিপীড়িত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলতে কাদের বলা হচ্ছে সেটাও CAA-তে নির্দিষ্ট করা আছে।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিশ্চান, জৈন, শিখ ও পার্সি-রা যদি ধর্মীয় নিপীড়ন বা অন্য কোন‌ও অত্যাচারের কারণে নিজেদের বাঁচাতে ভারতে এসে আশ্রয় নেন। তবে তাদের CAA আইনে আবেদন করলেই নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে। তবে এই আশ্রয় নেওয়ার সময়টা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে।

সাধারণত ভারতে আশ্রয় নেওয়ার শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নিয়ম হল, এদেশে টানা ১ বছর থাকতে হবে এবং শেষ ১৫ বছরের মধ্যে ১১ বছর বসবাস করতে হবে। কিন্তু CAA-তে ওই তিন দেশ থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নেওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১১ বছরের সময়সীমাটা কমে মাত্র ৫ বছর করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যদি কোন‌ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেন তবে তিনি CAA-র অধীনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন না।

CAA-এর সঙ্গে NRC-এর সম্পর্ক কতটা?

এনআরসি’ (NRC) র পুরো কথাটা হল ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনশিপ। এটি সঠিক ভারতীয় নাগরিকদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া অপরদিকে CAA হল নির্দিষ্ট তিনটি দেশে অত্যাচারের শিকার হয়ে যে ছটি ধর্মের সংখ্যালঘু মানুষরা ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া অর্থাৎ আইনের পরিভাষায় CAA এবং NRC এর মধ্যে সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে সিএএ-এর মাধ্যমে কারণ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অতীতের কিছু পদক্ষেপকে তুলে ধরে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, CAA-তে কারোর নাগরিকত্ব কাড়া না হলেও এর মাধ্যমে NRC চালুর প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা করছে মোদি সরকার। উল্লেখ্য দেশে এনআরসি এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র অসমে হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৪ লক্ষ বাঙালি অ-নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এনআরসি গোটা দেশজুড়ে চালু হলে বাংলা ও পঞ্জাবে প্রায় কোটি খানেক মানুষ বিপদে পড়বেন বলে আশঙ্কা। কারণ তাঁরা দীর্ঘদিন এদেশে বসবাস করলেও জমির প্রমাণপত্র না থাকায় নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে বিপদে পড়তে পারেন বলে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে CAA চালু হওয়ায় স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা বহু বাঙালি পরিবার ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠাঁই হওয়া নিয়ে ভয় পেতে শুরু করেছে। এই আশঙ্কা বাস্তবায়িত হবে কিনা তা আমরা বলতে পারব না। তবে CAA আইনের মাধ্যমে এটা হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু NRC হলে কী হবে, সরকার কীভাবে বিষয়টি দেখবে সেটা আমাদের পক্ষে এখনই বলা সম্ভব নয়।

🔥সরকারি সুবিধা, চাকরির সুবিধা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন আপডেট মিস করতে না চাইলে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়েন হয়ে থাকুন।

WhatsApp Group: Join Now

🔥 এগুলিও পড়ুন 👇👇

👉 ২ এর বেশি সন্তান থাকলে সরকারি চাকরি পাবে না উক্ত রাজ্যের বাসিন্দারা

👉 বাংলায় CAA হবেনা? ঠিক কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা?

👉 সারা দেশে চালু হয়ে গেল CAA, এবার কী হবে?

👉 চাষের ক্ষতি হলে টাকা দেবে সরকার! এইভাবে আগেভাগে আবেদন করুন

Leave a Comment