পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সব সময় রাজ্যবাসীর উন্নতি এবং কল্যাণের জন্য একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করে এসেছে। এবার রাজ্যের উদ্যোগে কর্মশ্রী প্রকল্প নিয়ে সামনে এসেছে একটি বড় খবর। এই প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাদের পরিবার এবার থেকে আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
কর্মশ্রী প্রকল্প কী?
কর্মশ্রী প্রকল্প হল মূলত সেই সমস্ত মানুষদের জন্য চালু করা, যারা ১০০ দিনের কাজের (MGNREGA) আয়তায় কাজ করলেও নির্দিষ্ট কারণে কাজ পাননি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার তাদের জন্য বিকল্প কাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ নির্দেশ
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিনহাটার একটি ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন, যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে হেনস্থা করা হয়েছিল। এরপরেই কর্মশ্রী প্রকল্প নিয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার।
সেই নতুন নির্দেশকায় যা যা বলা হয়েছে সেগুলি হল-
- যারা দেশের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।
- জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলাগুলি থেকে মোট ২.৫ লক্ষ নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারকে এই প্রকল্পের আয়তায় আনা হবে।
- সরকার বেসরকারের হিসাবের ভিত্তিতে আরো বেশি সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে কর্মর্শ্রী প্রকল্পে।
- কর্মশ্রী প্রকল্পের অধীনে পরিযায়ী শ্রমিকদের আবাস যোজনা প্রকল্পের কাজ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক এবং জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে চলমান বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়া নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।
প্রকল্পের প্রক্রিয়া এবং নজরদারি
কর্মশ্রী প্রকল্পটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্য সরকার চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন-
১. তালিকা প্রস্তুত
গ্রাম সংসদের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের একটি নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করা হবে।
২. নোডাল অফিসার নিয়োগ
প্রতিটি জেলায় কর্মশ্রী প্রকল্পের নোডাল অফিসার নিযুক্ত করা হচ্ছে, যারা তথ্য সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে কাজ বরাদ্দ করা, সমস্ত প্রক্রিয়া তদারকি করবে।
৩. বিডিও ও জেলা পরিষদের ভূমিকা
ব্লক উন্নয়ন অফিসার (BDO) এবং জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে কাজের সমস্ত দায়িত্ব এবং কর্মীদের সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
কর্মশ্রী প্রকল্পে রাজ্যের উদ্দেশ্য
রাজ্য সরকার চাইছে বাংলার প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাদের পরিবার যেন অর্থনৈতিক সুরক্ষা পায় এবং কাজের নিশ্চয়তা পান। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে চাইছে রাজ্য সরকার। স্থানীয় স্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি হবে এবং শ্রমিকদের জন্য নির্ভরযোগ্য আয়ের ব্যবস্থা তৈরি করা হবে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে চালু হল নতুন নিয়ম, এই মহিলারা আর টাকা পাবেন না
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মশ্রী প্রকল্প একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের জীবনমান আরো উন্নত হবে। এই প্রকল্পের নতুন নির্দেশগুলি শ্রমিকদের জন্য শুধু কাজের সুযোগই আনবে না, বরং তাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে।