পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলগুলি বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের অভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। হাজার হাজার পদ শূন্য রয়েছে, যার ফলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংকট দেখা দিয়েছে। রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি স্কুলে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও, রাজ্যের শিক্ষা বিভাগ এখনও নিয়োগের জন্য এগিয়ে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
শূন্যপদ এবং নিয়োগ বিলম্ব
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলগুলিতে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকের ঘাটতি সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ হয়েছে। বর্তমানে, রাজ্যে ৫,০০০ এরও বেশি শূন্য পদ রয়েছে, যা ছয় মাস আগে ৪,০০০ এরও বেশি ছিল। প্রধান শিক্ষকের জন্য সর্বশেষ নিয়োগ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যখন প্রায় ২,৫০০ পদ শূন্য ছিল। নিয়োগে এই বিলম্বের ফলে স্কুলগুলি সঠিক নেতৃত্ব ছাড়াই চলছে এবং শাসক দলের শিক্ষকদের অনেক স্কুলে শিক্ষক-ইন-চার্জ (টিআইসি) হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দিকে পদক্ষেপ
২০২৩ সালে, স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নিয়োগ নিয়ম তৈরি করে। নিয়মগুলির মধ্যে রয়েছে OMR শিট ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা করা, প্রতিটি প্রার্থীকে একটি ডুপ্লিকেট কপি প্রদান করা। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের বিধানও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই আপডেট করা নিয়মগুলি স্কুল শিক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও সেগুলির অনুমোদন দেয়নি।
রাজ্যের প্রশাসনিক কার্যালয় বিকাশ ভবনের সূত্র জানায় যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ফাইলটি সেপ্টেম্বরে সংশোধন করে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তবে, কয়েক মাস পেরিয়ে গিয়েছে, এবং এখনও কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মন্ত্রিসভা অনুমোদনের পরে, ফাইলটি রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে এবং তারপরে আরও প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিধানসভায় উপস্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন: ১ এর বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেই বিপদ! হবে মোটা টাকা ফাইন, RBI এর বড় ঘোষনা?
উদ্বেগ এবং সমালোচনা
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বিলম্বের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে কোনও আইনি সমস্যা নেই, তবে সরকার সমস্যা সমাধানে তৎপরতা দেখাচ্ছে না। মন্ডলের মতে, রাজ্যের প্রায় ৫,০০০ স্কুলে অধ্যক্ষ নেই এবং ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষকদের টিআইসি হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। তিনি এ ক্ষেত্রে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা এবং এই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি পূরণে চলমান বিলম্ব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সব মিলিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন কখন হবে এবং কখন প্রক্রিয়া শুরু হবে তা দেখার বিষয়। তবে, চলমান বিলম্বের কারণে অনেক স্কুল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ জরুরি হয়ে উঠছে।