কেন্দ্রীয় সরকার আবারও ব্যাংক বেসরকারিকরণের পথে হাঁটতে চলেছে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সম্প্রতি ভারতের বড় বড় চারটি সরকারি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব গ্রহণ করতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ও বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এতে গ্রাহকদের তেমন বড় কোন ক্ষতি হবে না, বরং পরিষেবা আরো উন্নত হতে পারে।
বেসরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত ব্যাংকগুলি
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) যে চারটি ব্যাংককে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সেগুলি হল-
- সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Central Bank of India)
- ইউকো ব্যাঙ্ক (UCO Bank)
- ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক (Indian Overseas Bank)
- পাঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাঙ্ক (Punjab & Sind Bank)
ব্যাংকগুলিতে সরকারের শেয়ার হোল্ডিং কত?
বর্তমানে ভারতের এই চারটি ব্যাংকে সরকারের উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব রয়েছে। সেগুলি হল-
- সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Central Bank of India)- ৯৩%
- ইউকো ব্যাঙ্ক (UCO Bank)- ৯৫.৪%
- ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক (Indian Overseas Bank)- ৯৬.৪%
- পাঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাঙ্ক (Punjab & Sind Bank)- ৯৮.৩%
শেয়ার বিক্রির পরেও সরকার এই ব্যাংকগুলোতে ন্যূনতম ২৫% অংশীদারিত্ব ধরে রাখবে। ফলে পুরোপুরি বেসরকারি হয়ে গেলেও সরকারি নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি শেষ হবে না।
কেন গ্রহণ করা হচ্ছে এমন পদক্ষেপ?
সরকারি ব্যাংকগুলির মূলধনের ঘাটতি পূরণ এবং তাদের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বাড়ানোর জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকগুলি যেখানে দ্রুত পরিষেবা দিচ্ছে, সেখানে সরকারি ব্যাংকগুলি পিছিয়ে পড়ায় মূলধনের প্রচুর অভাব দেখা যাচ্ছে। শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে এই মূলধন সংগ্রহ করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
কবে হতে পারে শেয়ার বিক্রি?
রাইটার্সের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, আগামী মাসেই সরকারের পক্ষ থেকে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব পেশ করা হতে পারে। ওপেন মার্কেট অফার (OFS) পদ্ধতিতে এই শেয়ার বিক্রি হবে। যদিও এই নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
শেয়ার বাজারে প্রভাব
এই ঘোষণার পরপরই ব্যাংকগুলির শেয়ারের মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংকের শেয়ার মূল্য বর্তমানে ৪.৪% বেড়েছে,
- সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাংকের শেয়ার মূল্য প্রায় ৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের সাথে পাল্লা, ২৫০০ টাকার মাসিক প্রকল্প শুরু করল এই রাজ্য সরকার
সাধারণ গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ
অনেক গ্রাহকই ভাবছেন ব্যাংকগুলি বেসরকারি হয়ে গেলে তাদের জমানো অর্থের ভবিষ্যৎ কি হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে এতে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের উপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ সরকার সম্পূর্ণ ভাবে মালিকানা ছেড়ে দিচ্ছে না। বরং পরিষেবা আরো দ্রুত হবে এবং গ্রাহকদের আরো সুবিধা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত সরকারি ব্যাংকগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাহকদের উন্নত পরিষেবা পাওয়া সুযোগ তৈরি করে দেবে। তবে সঠিক সময়ে শেয়ার বিক্রি এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তার উপর নির্ভর করবে এই পদক্ষেপের সফলতা।