পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বোধহয় শুরু হয়ে গিয়েছে। সরকারি গাফিলতি এবং শাসকদলের একাংশের যোগসাজশে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী নিয়োগে যে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে তা প্রমাণিত। সেই কারণেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে।
তার ফলে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী মিলিয়ে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এসএসসি ও চাকরি হারারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু এর ভয়াবহ প্রভাব অত্যন্ত প্রকট হয়ে দেখা দিতে শুরু করেছে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায়। স্কুলে স্কুলে পড়ুয়া ভর্তি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলে এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে পড়ুয়ারা। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বহু জায়গায়। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আদালত হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেওয়ায় অভূতপূর্বক শিক্ষক সঙ্কটে ভুগতে শুরু করেছে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের হাইস্কুলগুলো।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে ক্লাস নেওয়া তো দূরের কথা, পড়ুয়াদের পরীক্ষার খাতা দেখার মত শিক্ষকও অবশিষ্ট নেই বহু স্কুলে। গরমের ছুটি শেষ হলে স্কুলগুলোয় পঠন-পাঠন কীভাবে চলবে সেই নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে একাদশ শ্রেণিতে নতুন পড়ুয়াদের ভর্তি নিলে তাদের ক্লাস করানো যাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বীরভূমের জাজিগ্রাম সর্বোদয় আশ্রম হাইস্কুলের পক্ষ থেকে রীতিমত নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষকের অভাবে তারা এবার আর একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়াদের ভর্তি নেবে না।
বীরভূমের এই স্কুলটির নোটিশ প্রকাশ্যে আসার পর বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তবে শিক্ষা মহল সূত্রে খবর, আগামী কিছুদিনের মধ্যে বাংলার আরও বহু স্কুল একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে এমনই নোটিশ দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইলে ২টি সিম কার্ড থাকলেই সমস্যা! Jio, Airtel, VI সবার জন্যই নতুন প্ল্যান
এই মুহূর্তে শিক্ষকদের চাকরি-বাতিলের মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে। কিন্তু সেখানে কী রায় হয় তার উপর সবকিছু নির্ভর করছে। সর্বোচ্চ আদালত যদি কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে তবে সত্যিই বাংলার পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সঙ্কটের মুখে পড়ে যাবে।
তবে এক্ষেত্রে আদালতের দিকে আঙুল তুলতে রাজি নন অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষকরা। তাঁরা বলছেন, সরকার ও শাসক দলের চরম অন্যায়ের প্রভাবেই এইভাবে ধ্বংস হতে বসেছে বাংলার শিক্ষা জগৎ।