পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে গরিব এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষরা বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রকল্পের দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগগুলিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে রাজ্য সরকার এবার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও বিশেষ মোবাইল অ্যাপের সাহায্য নেওয়া হবে এবার থেকে।
রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের প্রতিটি ধাপ এখন থেকে করা নজরদারিতে রাখা হবে। এই নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে এই প্রকল্পের সঠিক সুবিধা সঠিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করা হবে এবং হাসপাতালগুলিতেও অনিয়ম রোধ করা যাবে।
কী কী নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে?
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে দুর্নীতি রোধ করতে রাজ্য সরকার কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছে। সেগুলি হল-
রোগীর ছবি ও ভিডিও আপলোড
রোগী যখন হাসপাতালে ভর্তি হবেন সেই মুহূর্ত থেকে রোগীর ছবি এবং ভিডিও নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে এবার থেকে স্বাস্থ্য ভবনে পাঠাতে হবে। এর ফলে আর দুর্নীতি হবে না।
রোগীর GPS লোকেশন
রোগী যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সেই হাসপাতালে GPS লোকেশন সার্ভারে পাঠাতে হবে। লোকেশন আপডেট একবারই করা যাবে এবং তা এডিট করা যাবে না।
নিয়মিত আপডেট
রোগী ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার সময় এবং চিকিৎসা চলাকালীন বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি এবং ভিডিও পাঠাতে হবে। এছাড়া অপারেশনের আগে ও পরে রোগীর অবস্থার তথ্য আপলোড করতে হবে। রোগীর ছুটি নেওয়ার সময়ও সমস্ত আপডেট পাঠানো বাধ্যতামূলক।
ডায়ালিসিস, কেমোথেরাপি সহ অন্যান্য চিকিৎসায় নজরদারি
এবার থেকে ডায়ালাইসিস, কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে।
AI যাচাই করবে তথ্য
আপলোড করা ছবি ও ভিডিও-এর জালিয়াতি আটকাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহার করা হবে এবার থেকে। যদি তথ্য সঠিক না হয় তাহলে সেই হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। তবে এই অ্যাপটি শুধুমাত্র হাসপাতালে ৫০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই কাজ করবে। ওই নির্দিষ্ট এলাকাতেই ছবি ও ভিডিও আপলোড করা যাবে।
চিকিৎসকদের ভূমিকা ও দায়বদ্ধতা
এই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে চিকিৎসকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। রোগীর প্রতিটি পর্যায়ের তথ্য চিকিৎসকের স্মার্ট ফোন থেকেই এবার আপলোড করতে হবে। যদি কোন তথ্য সঠিকভাবে না দেওয়া হয় বা জাল প্রমাণিত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের পাশাপাশি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জরিমানা ও শাস্তির আদেশ
জালিয়াতি বা ভুল তথ্য প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম তথা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হবে। এমনকি স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত হতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি। তাই এখন থেকে এই নতুন নিয়মগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ মিলবে আরও সুবিধা, ২০২৬ এর আগেই বিরাট প্ল্যান মমতার
কেন এই পদক্ষেপ?
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের বহু মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায়। তবে দুর্নীতি এবং অনিয়ম এই প্রকল্পের সুবিধাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই কৃত্রিম প্রযুক্তির (AI) সহায়তায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজ্য সরকার সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সঠিক মানুষকে দেবে। এই নিয়মগুলির মাধ্যমে প্রকল্পের সুবিধা সঠিক ভাবে পৌঁছবে প্রকৃত উপভোক্তাদের কাছে এবং স্বাস্থ্যপরিসেবার মান এবার থেকে আরও উন্নত হবে।