রাজ্যের প্রায় ১১ লক্ষ মানুষের জন্য পাকা বাড়ি তৈরীর লক্ষ্যে বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের আয়তায় একটি সুপার চেকিং প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং তাদের মাথার উপর একটি ছাদ নিশ্চিত করা।
তালিকা যাচাই এবং পুনর্মূল্যায়ন
গত অক্টোবর মাস থেকেই রাজ্য সরকার বাংলা আবাস যোজনার উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকার প্রস্তুতির জন্য একটি সমীক্ষা চালায়। তবে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক পর্যায়ে সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে রাজ্যের প্রায় ২০ শতাংশ উপভোক্তার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাদ দেওয়া ২০ শতাংশ আবেদনকারীর পুনরায় যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে এবং সেই উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে সুপার চেকিং সমীক্ষা। মুখ্যমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য হলো কোন আবেদনকারী যেন এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হয়, সবাই যেন এই প্রকল্পে আয়তায় আসতে পারে।
সুপার চেকিং সমীক্ষার উদ্দেশ্য
রাজ্য সরকার পরিচালিত এই সুপার চেকিং প্রক্রিয়া ৭ই নভেম্বর থেকে শুরু হবে এবং চলবে ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত। এই প্রক্রিয়ায় জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা শাসক এবং মহকুমা শাসক সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা অংশ নেবেন এবং প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করবেন।
সরকারি ছুটির মধ্যে চলা এই প্রক্রিয়ায় সরকারি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করবেন যেন প্রকৃত উপভোক্তা তালিকা থেকে কোনমতেই বাদ না পরে। সবাই যেন এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে।
প্রকৃত সুবিধাভোগী নির্ধারণের সরাসরি যাচাই
এই চেকিং-এর উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত সুবিধাভোগীদের নির্বাচন করা এবং যাতে ভুলবশত অযোগ্য ব্যক্তিরা তালিকায় স্থান না পায় সেই বিষয়ে পুনরায় নজরদারি করা। এর মাধ্যমে কোন যোগ্য ব্যক্তি এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হবে না। সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, কোন সুপারিশ বা বিশেষ অনুরোধের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে না।
বাড়িতে গিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করেই এই তালিকা প্রস্তুত করা হবে। বরং শুধুমাত্র প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিদেরকেই আবাস যোজনার সুবিধা দেওয়া হবে। যাদের ইতিমধ্যেই পাকা বাড়ি আছে, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে সমীক্ষায় গোয়াল ঘর বা রান্নাঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের নাম এই চেকিং লিস্ট থেকে সরাসরি বাদ দেওয়া হবে।
প্রাথমিক তালিকা এবং আপত্তির অভিযোগ
নভেম্বর মাসে প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়ে গেলে সেটি ব্লক, মহকুমা এবং জেলা অফিসে সরাসরি টাঙিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ২১ থেকে ২৭ শে নভেম্বরের মধ্যে স্থানীয় মানুষরা এই তালিকায় আপত্তি জানাতে পারবেন।
যদি মনে করেন যে কোন অযোগ্য ব্যক্তি তালিকায় স্থান পেয়েছে তাহলে তারা আপত্তি জানিয়ে সরাসরি তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলতে পারবেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা পুনরায় যাচাই করে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যাবেন এবং তারপর ওই ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে এবার বড় চমক! ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা করা হচ্ছে ভাতার পরিমাণ
কিস্তি প্রদান শুরুর পরিকল্পনা
রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা করেছে যে আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে বাংলা আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির অর্থ বিতরণ করা শুরু হবে। অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বরের পর থেকে আবেদনকারীরা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে যাবে।
সঠিক তালিকা তৈরিতে কোন ভুল যেন না হয় তার জন্য প্রশাসন এত দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। এই উদ্যোগের ফলে খুব তাড়াতাড়ি রাজ্যের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষরা আর্থিক সহায়তার সুযোগ পাবেন বলেই আশা করা যাচ্ছে।