তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প বলে রাজ্য সরকারের চালু করা একটি প্রকল্প রয়েছে। যেটি কোভিডের সময় থেকে চালু করা হয়, যেখানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল অথবা ট্যাব কিনে পড়াশোনা করবার জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
এই বছর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের মোবাইল এবং ট্যাব কিনে দেওয়ার জন্য আনুমানিক ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করেছে শিক্ষা দপ্তর, এই অর্থের পরিমাণ জানবার পরেই শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
অনেক শিক্ষকদের বক্তব্য এই যে, বর্তমানে যেখানে রাজ্যের মধ্যে গড়ে ওঠা একাধিক স্কুলে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে, রাজ্যের বহু সরকারী স্কুল কার্যত উঠে যেতে চলেছে শিক্ষক শিক্ষিকার নিয়োগ নেই বলে সেখানে এই বিপুল পরিমাণ টাকা মোবাইল ফোন বা ট্যাব কেনার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে কেন? এই টাকাতে তো স্কুল গুলোর উন্নতি করা যেতে পারত বলে নানান মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে।
অনেক শিক্ষক মহাশয় আছেন যারা মনে করেন যে শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ট্যাব টি বর্তমান যুগে প্রয়োজনীয় হলেও ঠিকঠাক ক্লাস ঘর ,আধুনিক ল্যাবরেটরি, এগুলো অত্যন্ত জরুরী। যেখানে ন্যূনতম পরিকাঠামোর অভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে ট্যাবের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়াটি বিলাসিতা বলেই মনে করছেন তারা। তাদের কথা অনুযায়ী ১৫০০ কোটি টাকা কম্পিউটার, ল্যাবরেটরি,ডিজিটাল ল্যাবরেটরি ও স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরির কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোভিডের সময় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের ট্যাব দেওয়া শুরু হলেও এই বারের খরচ অন্যান্য বারের থেকে অনেকখানি বেশি হওয়াতেই এই প্রশ্ন উঠেছে। অন্যান্য বারের থেকে খরচ বেশি কারণ আগের বছর যে সকল পড়ুয়াদের টাকা দেওয়া হয়নি, তাদের যেমন এই বছর টাকা দেওয়া হবে একই সাথে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এবার একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের কেও টাকা দেওয়া হবে।
এই বছর ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার ২৫২ জন পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অনুযায়ী একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী মিলিয়ে মোট ১৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে তাদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে যদি ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার দিতে হয় তাহলে এখানে ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
এই খানে কিছু শিক্ষক সংগঠন মনে করেন যে ট্যাব দেওয়ার থেকে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাবরেটরি ও মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ানো বেশি প্রয়োজন ছিলো। তাদের মতে এই টাকাতে স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন: বড় সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতার, এইভাবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে
শিক্ষা দপ্তরের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে, বর্তমান যুগটি যেহেতু ডিজিটাল যুগ হয়ে উঠেছে সেই কারণে এই সময় ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে মোবাইল ফোন বা ট্যাব থাকা জরুরী কারণ এক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি কাজে আসবে। তবে অনেক শিক্ষকের মতে, স্কুলে মোবাইল ফোন আনার ক্ষেত্রে মানা আছে অথচ সরকার নিজেই ট্যাব দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে স্কুলগুলির তরফ থেকে ছাত্রছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহের কথা বলা হয়ে গেছে, খুব শীঘ্রই সকল তথ্য ডিজিটালে আপলোড হয়ে গেলে আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসেই ট্যাবের টাকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।