রাজ্য সরকারি কাজে ফাঁকিবাজি ধরতে এবং উন্নয়নের গতি আরো বৃদ্ধি করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এবার আধিকারিকদের আর অফিসে বসে কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিতে হবে না। ময়দানে নেমে কাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে নবান্নে তৈরি হয়েছে একটি বিশেষ অ্যাপ এবং হেল্পডেস্ক।
সরকারি কাজের স্বচ্ছতা বাড়াতে নয়া উদ্যোগ
অর্থ দপ্তরের নির্দেশনায় চালু হচ্ছে এই বিশেষ অ্যাপের। এই অ্যাপের মাধ্যমে সরকারি আধিকারিকদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় কাজ পর্যবেক্ষণের সময় জিও ট্যাগিং-এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে তারা স্বশরীরে সেই জায়গায় উপস্থিত থেকে কাজ করেছেন কিনা। পাশাপাশি কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য সরাসরি অ্যাপে আপলোড করতে হবে।
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, অনেক সময় কাজ শুরু হলেও সেটি মাঝপথে থেমে যায়। আর সরকার সেই কাজের সঠিক তথ্য জানতে পারে না। এই অ্যাপের মাধ্যমে কাজের দেরি বা বাধার প্রকৃত কারণগুলি তদারকি করা খুবই সহজ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অ্যাপের মাধ্যমে সরকারি কাজের নজরদারি
নবান্ন কর্তৃক পরিচালিত এই অ্যাপটির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে নজরদারি চালানো হবে। যেমন-
- জিও ট্যাগিং- আধিকারিকদের কাজের জায়গায় জিও ট্যাগিং-এর মাধ্যমে তাদের লোকেশন নিশ্চিত করা হবে।
- ডিজিটাল রিপোর্টিং- সমীক্ষার রিপোর্ট, কাজের অগ্রগতি এবং ক্ষেত্রভিত্তিক ছবি অ্যাপে আপলোড করতে হবে।
- ওটিপি যাচাই- প্রতিটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে ছয় সংখ্যার ওটিপি দিয়ে অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে, যে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক কাজ সম্পন্ন করেছেন কিনা
এছাড়া রাস্তা নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জল এবং পরিছন্নতার মত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প পর্যবেক্ষণ এই অ্যাপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
কেন প্রয়োজন এই অ্যাপের?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কাজে নজরদারির অভাব ঘটছে। প্রশাসনিক স্তরের অনেক আধিকারিক সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্র মহলে।
এমনকি শাসক দলের একটি অংশ মনে করে, সরকারি আধিকারিকদের কাজের গাফিলতের জন্য জনসাধারণ সময়মতো পরিষেবা পাচ্ছে না, যা রাজনৈতিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই এই অ্যাপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণের সুবিধা
প্রতিটি ব্লক এবং মহকুমা স্তর থেকে আসা রিপোর্ট সরাসরি রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছাবে এই অ্যাপের মাধ্যমে। নতুন হেল্প ডেস্ক এই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও তদারকি করবে। অ্যাপটি তৈরি করতে গিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলির ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আদল অনুসরণ করা হয়েছে।
যেমন- খাদ্য ও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি তাদের কর্মীদের মাঠ পর্যবেক্ষণ করার জন্য জিও ট্যাগিং ব্যবহার করবে। একইভাবে সরকারি প্রকল্পগুলির কাজও এই অ্যাপের মাধ্যমে এবার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আরও পড়ুন: ১ এর বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেই বিপদ! হবে মোটা টাকা ফাইন, RBI এর বড় ঘোষনা?
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই অ্যাপটির মাধ্যমে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ খুবই সহজ হবে এবং প্রকল্পগুলি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। নবান্ন আশা করেছে যে, এই পদক্ষেপ প্রশাসনিক স্তরে আরো শৃঙ্খলা আনতে এবং মানুষের কাছে সময় মত পরিষেবা পৌঁছে দিতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।