রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক চর্চার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প। এবার তমলুক শহরে অধিকাংশ মহিলারা অভিযোগ তুলেছেন তারা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন না।
এই অভিযোগ সামনে আসতেই পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিকার চেয়ে তমলুক পৌরসভার দ্বারস্থ হয়েছেন জেলার উপভোক্তারা। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন পৌরসভার চেয়ারম্যান।
নতুন অভিযোগে বাড়ল বিতর্ক
সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাধিক জায়গায় ট্যাব বিতরণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে তমলুকের মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে এই অভিযোগ সরকারকে নতুন করে চাপে ফেলেছে। এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছে তারা কয়েক মাস ধরে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা পাচ্ছে না। তাদের সংসার চালাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। তাই তারা পৌরসভায় অভিযোগ জানাতে বাধ্য হয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বড় ঘোষণা
এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগেই বড় ঘোষণা করেছিলেন যে ডিসেম্বর মাস থেকে নতুন করে আরো ৫ লক্ষ ৭ হাজার মহিলাকে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় আনা হবে এবং তাদেরকে প্রতি মাসে ভাতা প্রদান করা হবে। নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন এই প্রকল্পে যুক্ত মহিলাদের সংখ্যা ডিসেম্বর মাস থেকে বেড়ে হবে ২ কোটি ২১ লক্ষ।
নতুন সুবিধাভোগী প্রার্থীদের জন্য বছরে অতিরিক্ত ৬২৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে। ডিসেম্বরে প্রথম থেকেই এই সুবিধা নতুন উপভোক্তারা তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে পেয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন লক্ষ্মীর ভান্ডার বাংলার এক অমূল্য সম্পদ। সরাসরি এই প্রকল্পে পাওয়া ২৪ হাজারের বেশি আবেদন খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আরো বেশি সংখ্যক মহিলাকে এই সুবিধা দেওয়া হবে।
বিরোধীদের সমালোচনা ও রাজনৈতিক প্রভাব
বিরোধী দলগুলির মতে প্রকল্পটি শুধুই ভোট নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের দাবি, লোকসভা ভোটে তারা আরো বড় অঙ্কের অর্থ এই ধরনের প্রকল্পে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের মতে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট ব্যাংক তৈরি করে রাখতে বড় ভূমিকা পালন করছে।
আরও পড়ুন: ঢুকছে না লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা, এবার বড় কথা জানালো রাজ্য সরকার
মহারাষ্ট্রের মহালক্ষ্মী যোজনা
এই প্রকল্পের সফলতার প্রভাব এতটাই বেশি যে মহারাষ্ট্রের বিরোধী দল তাদের রাজ্যের মহিলাদের জন্য প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা ভাতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের এই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে মহালক্ষী যোজনা। এই প্রকল্পের মাধ্যমেও রাজ্যের মহিলারা আর্থিকভাবে সাহায্য পাচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প নিয়ে একদিকে যেমন সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়নের পথে এগোচ্ছে, অন্যদিকে অভিযোগ এবং বিতর্ক লেগেই রয়েছে। তমলুকের এই পরিস্থিতি রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার বিষয় পৌরসভা এই সমস্যার সমাধানে কত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।