সন্তানের আবদার বা বায়না পূরণের চেষ্টায় অনেকে অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের হাতে নানা ধরনের জিনিস তুলে দেন। তবে এই প্রবণতা কখনো কখনো শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সন্তানের বায়না পূরণ করার আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা অবশ্যই জরুরী।
আজকের প্রতিবেদনে জেনে নিন এমন ৭টি জিনিস যা শিশুর বায়না মেটাতে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এগুলো শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে এবং কেন সেগুলো তাদের দেওয়া উচিত নয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
১. গেজেট বা বৈদ্যুতিন ডিভাইস
গেজেট বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস শিশুদের মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ইলেকট্রনিক কোন ডিভাইসের ফলে শিশুদের মধ্যে মনোসংযোগের অভাব, চোখের সমস্যা সহ ঘুমের ব্যাঘাতও দেখা যেতে পারে। তাছাড়া ছোট থেকেই মোবাইল বা ট্যাব দেখে বড় হলে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শিশুরা পড়াশোনা করতে চায় না এবং তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই ধরনের ডিভাইস থেকে শিশুদের দূরে রাখুন।
২. সস্তার প্লাস্টিকের খেলনা
বাচ্চাদের আবদার মেটানোর জন্য অনেক অভিভাবক অনেক সময় সস্তার প্লাস্টিকের খেলনা তাদের বাচ্চাদের কিনা দেয়। এই সমস্ত সস্তার প্লাস্টিক খেলনায় বিপদজনক রাসায়নিক উপাদান যেমন- অ্যান্টিমনি, বেরিয়াম, ব্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি থাকে। এগুলো শিশুর শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে শিশুদের অনেক রোগ হয়। এইসমস্ত খেলনা মুখে দিলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক লালা শরীরে প্রবেশ করে। তাই সস্তার প্লাস্টিকের খেলনার পরিবর্তে নিরাপদ ও টেকসই খেলনা বেছে নেওয়ায় শ্রেয়।
৩. চিপস, চকলেট এবং অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার
চিপস, চকলেট এবং নরম পানিও বা অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবার থেকে ডায়াবেটিস, ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই ছোট থেকেই এই সমস্ত খাবার শিশুকে দিলে ভবিষ্যতে তাঁদের বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তাই শিশুদের ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার প্রদান করুন।
৪. প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট যুক্ত ভিডিও গেম
বাচ্চাদের আবদার মেটানোর জন্য অনেক সময় মোবাইলে বিভিন্ন ভিডিও গেমস চালিয়ে শিশুদের দেওয়া হয়। ভিডিও গেম শিশুদের বুদ্ধি এবং মনোসংযোগের উন্নতি করতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু গেম প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট ধারণ করে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরনের গেমের পরিবর্তে ব্রেন গেম বা বাদ্যযন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে তাদের বিনোদন প্রদান করা উচিত। এই সমস্ত জিনিসে তাদের মানসিক বিকাশ হয়।
৫. অত্যন্ত দামি উপহার
ছোট থেকেই বাচ্চাদের খুব দামী উপহার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে শিশুরা অর্থের মূল্য বুঝতে শিখবে না এবং তাদের চাহিদা দিনের পর দিন বাড়তে থাকবে। তাই অত্যন্ত দামি উপহার দেওয়ার বদলে তাদেরকে মূল্যবোধের শিক্ষা দিন। এতে আপনার শিশুর মানসিক এবং শারীরিক বিকাশ ঘটবে।
৬. আরামদায়ক নয় এমন পোশাক
শিশুদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সিন্থেটিক বা জর্জেটের পোশাক শিশুদের ত্বকে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিশুদেরকে সবসময় সুতির এবং আরামদায়ক পোশাক পরান। এতে তাদের ত্বকের কোনরকম সমস্যা দেখা দেবে না।
আরও পড়ুন: কর্মচারীদের জন্য সুখবর! এবার থেকে বেতন ছাড়াও বাড়তি ৬০০০ টাকা ঢুকবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে
৭. কস্টিউম জুয়েলারি
বাড়ির মা-বোনদের দেখে শিশুরা যদি কস্টিউম জুয়েলারি পড়ার বায়না করে, তাহলে ছোট থেকে তাদের এই সমস্ত জিনিস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এগুলি মোটেও নিরাপদ নয়। এই ধরনের গয়না ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে থাকা ক্যাডমিয়াম এবং লেড ধাতু শিশুর স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই এই ধরনের জুয়েলারি শিশুদের ছোট থেকে না দেওয়াই ভালো।
সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে এবং তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটাতে এবং তাদের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা এই সমস্ত জিনিসগুলি সবসময় মাথায় রাখবেন।