এতদিন যাবৎ শহরের মানুষ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পেতে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো। তবে সেই চিত্র এবার বদলাতে চলেছে। হ্যাঁ, এবার শুরু হতে চলেছে মাইক্রো এটিএম পরিষেবা। জানা যাচ্ছে, যে সমস্ত অঞ্চলে এখনও ব্যাংকের শাখা নেই বা কোন এটিএম নেই, এই সমস্ত জায়গায় খুব সহজেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে যাবে। আর তার নেপথ্য থাকছে এক ছোট্ট এক যন্ত্র। যার নাম মাইক্রো এটিএম।
বদলে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা
আগে যেখানে গ্রামের মানুষজনদের টাকা তুলতে বা ব্যাংকের ব্যালেন্স জানার জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি জমাতে হতো, সেখানে এখন স্থানীয় মুদি দোকানে গেলেই মিলছে সমস্ত পরিষেবা। কারণ এখন মুদির দোকানের বিক্রেতা একজন ব্যাংকের প্রতিনিধি হয়ে উঠছে।
জানা যাচ্ছে, গ্রাহক তার ডেবিট কার্ড দিয়ে এবার সহজেই টাকা তুলতে পারবেন। এমনকি ব্যালেন্স দেখতে পাবেন, আবার কোনোরকম অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই। আর এই ব্যবস্থার নামই হলো মাইক্রো এটিএম পরিষেবা।
কীভাবে কাজ করবে এই পরিষেবা?
মাইক্রো এটিএম আসলে একটি ছোট হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইস, যেটিকে দেখতে অনেকটা ইলেকট্রিক POS মেশিনের মতো। আর এটি ব্যাংকের সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে। প্রথমে গ্রাহককে তার ডেবিট কার্ড মেশিনে প্রবেশ করাতে হবে।
এরপর পিন নাম্বার দিয়ে প্রয়োজনীয় টাকা তোলার অনুরোধ জানাতে হবে। এরপর ব্যবসায়ী হাতে হাতে সেই টাকা দিয়ে দেবে। আর এই প্রক্রিয়া এতটাই সহজ এবং নিরাপদ, যে গ্রামের প্রবীণ নাগরিকরাও খুব সহজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে।
কেন প্রয়োজন পড়ছে এই পরিষেবার?
ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫% গ্রামীণ এলাকায় বাস করে। অথচ দেশের মাত্র ২০% এটিএম রয়েছে গ্রামীণ অঞ্চলে। আর এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করছে যে, গ্রামীণ ভারত ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে ঠিক কতটা পিছিয়ে রয়েছে।
তবে সবথেকে আশার খবর এই যে, সরকার এবং বিভিন্ন ব্যাংক জোর দিচ্ছে এই প্রযুক্তির উপর। কারণ এতে যেমন সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, তেমনই সরকারকে খুব একটা ব্যয় করতে হবে না।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে মাইক্রো এটিএম এর সংখ্যা ছিল মাত্র ১.২৪ মিলিয়ন। তবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪৬ মিলিয়নে, যা প্রায় ১৮% বৃদ্ধি। অন্যদিকে একই সময়ের মধ্যে দেশের সাধারণ এটিএম এর সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। ২০২৩-এ যেখানে সংখ্যা ছিল ২.১৯ লক্ষ, সেখানে ২০২৪-এ কমে দাঁড়িয়েছে ২.৫ লক্ষে।
আরও পড়ুন: বন্ধ হয়ে যাচ্ছে Vi-র পরিষেবা! সংস্থা নিজেই জানিয়ে দিল, গ্রাহকদের কী হবে?
ব্যাংকিং-এর পাশে হবে কর্মসংস্থান
এই নয়া পরিষেবা শুধুমাত্র যে ব্যাংকিং সুবিধা দিচ্ছে, এমনটাও কিন্তু নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য আয়ের উৎসও তৈরি করে দিচ্ছে। হ্যাঁ, বিজনেস করসপন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করে প্রতিটি লেনদেনের উপর কমিশন পাবেন এবার ব্যবসায়ীরা।
পাশাপাশি গ্রামীণ মহিলাদের জন্য এই প্রযুক্তি বিরাট উপকারী হতে পারে। কারণ বাড়ির কাছেই ব্যাংকিং পরিষেবা থাকার ফলে অনেকেই এবার ইচ্ছা মতো নিজেই টাকা তোলা বা ব্যালেন্স চেক করতে পারবে।