আমরা অনেকেই দেখেছি, ৫০০ টাকার নোটে (500 Rupee Note) ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের বদলে মনোরঞ্জন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া লেখা রয়েছে। আর সেই নোটটি অনেকটা আসলের মতোই দেখতে। এক ঝলকে দেখে ধরাই যাচ্ছে না। এমনই এক প্রতারণার ঘটাল উত্তর ২৪ পরগনা সন্দেশখালিতে। হ্যাঁ, জাল টাকার নামে কোটি টাকার কাগজ ছেপে চালানো হচ্ছিল বিস্কুটের পেটি অপারেশন।
ঘটনাটি কী?
আসলে গত ১৮ জুলাই সন্দেশখালির ধামাখালি এলাকায় এক গেস্ট হাউসের সামনে একটি গাড়ি দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে একের পর এক বিস্কুটের পেটি নামানোতে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে খুলতেই চমকে যায়, যে ভেতরে রয়েছে মনোরঞ্জন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ছাপা একের পর এক ৫০০ টাকার বান্ডিল।
যতটা নিখুঁতভাবে ছাপা, তাতে এক ঝলকে বোঝার উপায় নেই। এমনকি নোটগুলি ব্যাংকে জমা দিয়েও দেওয়া যাবে অনায়াসে। আর যদি সত্যিই এগুলি আসল টাকা হয়, তাহলে পুলিশ সূত্রের খবর, তার মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে।
গ্রেপ্তার তিন অভিযুক্ত
ঘটনার তদন্ত নেমে পুলিশ প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিরাজ উদ্দিন মোল্লা এবং দেবব্রত চক্রবর্তী নামের ২ যুবককে গ্রেফতার করে। এরপর বীরভূমের রামপুরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয় চক্রের মূল মাথা তিস্তা সেনকে। জানা গিয়েছে, তিস্তা উত্তর ২৪ পরগনা রাজারহাটের বাসিন্দা এবং আগেও তার নাম পুলিশের খাতায় ছিল।
জেলা পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান জানিয়েছেন যে, তিস্তা এই চক্রের সবথেকে বড় পরিকল্পনাকারী। সে কীভাবে পুরো প্রতারণা ঘটাবে, কোথায় হবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সবকিছুরই নেতৃত্ব দিত।
কীভাবে চলত এই প্রতারণা?
আসলে এই চক্রের কাজ ছিল খুব তীক্ষ্ণ মাথার। লক্ষ্য থাকতো বড় বড় ব্যবসায়ীরা, যাদের হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণে টাকার দরকার হয়। তখনই নগদে টাকা ধার দেওয়ার নাম করে তারা যোগাযোগ করত, আর দেওয়া হতো কিছু আসল টাকা এবং তার ভেতরে মিশিয়ে দেওয়া হত এই মনোরঞ্জন ব্যাংকের কাগজ। যখন ব্যবসায়ীরা খেয়াল করতেন, তখন সবকিছুই শেষ। এমনকি ওই চক্র অস্বীকার করতে যে, আমরা তো আসল টাকা দিয়েছি। ফলে কোনও লিখিত প্রমাণ না থাকায় মামলা করা কঠিন হয়ে পড়ত।
আরও পড়ুন: জন্ম তারিখ নিয়ে জালিয়াতি আধার কার্ডে! এবার বিরাট পদক্ষেপ নিল UIDAI
তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দলটির একাধিক সদস্যের আগে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে এবং তাদের নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। শুধু জাল টাকা নয়, বরং এরা জমি কেনাবেচা নিয়েও কেলেঙ্কারিতে চালাত বলে খবর। তিস্তা সেনের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও গুরুতর অভিযোগ। ঝাড়খন্ডে পালিয়ে যাওয়ারও ছক করেছিল সে। রবিবার তাকে গেস্ট হাউস থেকে গ্রেফতার করা হয়, আর আদালতে হাজির করে দশ দিনের হেফাজতের আবেদন করেছেন পুলিশ।