পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রচলিত লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প মহিলাদের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার রাজ্যের মহিলাদের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে। ২০২১ সালে প্রথমবার এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে বহু মহিলা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের অসংখ্য গৃহিণী ও কর্মহীন মহিলারা মাসিক ভাতা পেয়ে থাকেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে সঞ্চয় এবং সংসার খরচ সামলানোর যোগান দেয়। তবে বিশেষ কিছু কারণের জন্য অনেক মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আসুন আজকের প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে আপনি এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন এবং কিভাবে নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের ভাতা
রাজ্য সরকারের পরিচালিত লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের আওতায় ভাতার অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে মূলত দুইটি বিভাগে-
- জেনারেল ক্যাটাগরি- এই শ্রেণীর মহিলারা প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে ভাতা পেয়ে থাকেন।
- তপশিলি জাতি ও উপজাতি ক্যাটাগরি- এই ক্যাটাগরির মহিলারা প্রতিমাসে ১২০০ টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন।
প্রতি মাসের নির্দিষ্ট একটি দিনে এই অর্থ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। এই আর্থিক সহায়তা অনেক মহিলার জন্য একটি আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে।
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে টাকা না পাওয়ার কারণ
ইদানিং দেখা যাচ্ছে অনেক মহিলা এই লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং এই সমস্যার মূল কারণগুলির মধ্যে প্রধানটি হল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড সংযুক্ত না থাকা।
যে সমস্ত মহিলারা তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের একাউন্টে এই প্রকল্পের টাকা জমা পড়ছে না। এর ফলে অনেক মহিলা প্রত্যাশিত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সেই জন্য তাদের প্রয়োজনে অবিলম্বে ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করা জরুরী।
এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ফর্ম পূরণের সময় সঠিক তথ্য না দেওয়া বা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জমা না দেওয়ার কারণে আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই আবেদন করার সময় অবশ্যই সমস্ত তথ্য দেখে নিয়ে বুঝে শুনে আবেদন করাটা জরুরী।
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও যোগ্যতা
এই প্রকল্পে আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট প্রয়োজন। যেগুলি হল-
- আবেদনকারীর একটি আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। এটি ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে লিংক করতে হবে।
- আবেদনকারীকে অবশ্যই স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের অধিকারী হলে সেটি জমা দিতে হবে।
- সাম্প্রতিক রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য ব্যাংকের পাসবুকের প্রথম পাতার জেরক্স।
- কাস্ট সার্টিফিকেট থাকলে সেটি জমা দিতে হবে।
এছাড়া আবেদনকারী যদি কোন সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকেন তাহলে এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হবেন।
আবেদন প্রক্রিয়া
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অফলাইনে করতে হয়। আবেদন করার জন্য নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন-
- প্রথমে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প থেকে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে।
- এরপর নিজের সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে লিখে ফরমটি পূরণ করতে হবে।
- ফর্মের সঙ্গে উল্লেখিত সমস্ত ডকুমেন্ট যেমন- আধার কার্ড, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড, ব্যাংকের পাসবুকের জেরক্স, ফটো ইত্যাদি জমা করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ডকুমেন্টগুলি যাচাই করা পর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরাসরি আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বর মাস থেকেই কৃষকদের জন্যে দারুন সুখবর, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে দ্বিগুণ অর্থ ও MSP বৃদ্ধি
ভবিষ্যতে ভাতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা
শোনা যাচ্ছে আগামী ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পের অধীনে মাসিক অর্থ বৃদ্ধি করা হবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন ঘোষণা করা হয়নি। তবুও এটা নিয়ে রাজ্যের মহিলাদের মধ্যে একটি আসার আলো তৈরি হয়েছে। অর্থ বৃদ্ধির এই সম্ভাবনা প্রকল্পটিকে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তুলবে এবং এর ফলে আরো বেশি মহিলা এই প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে এটাই আশা করা যায়।