নিজের বাড়ির নিজে তৈরি করার উপর জোর দিচ্ছে এবার রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মত উপভোক্তাদের ব্যাংক একাউন্টে আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
তবে প্রশাসন আশঙ্কা করছে যে, এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমন প্রবণতা আটকাতে জেলা প্রশাসনগুলিকে বাড়তি নজরদারি করার পরামর্শ দিয়েছে নবান্ন।
নিজের বাড়ি নিজে তৈরি করুন: প্রশাসনের বার্তা
নবান্নের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, উপভোক্তারা যেন নিজেদের বাড়ি নিজেরাই তৈরি করেন। নির্মাণ সামগ্রী বা রাজমিস্ত্রি সরবরাহের দায়িত্ব অন্য কারোর হাতে তুলে দেওয়ার হাত থেকে বিরত থাকেন প্রত্যেক উপভোক্তা।
প্রশাসনিক কর্তাদের মতে এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালীরা অর্থের বিনিময়ে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে অনিয়মের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রক্রিয়ার উপর জোর
পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রথম কিস্তির টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে পাঠাচ্ছেন। আমরা চাই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে বাড়ি তৈরীর কাজ সম্পন্ন হোক।”
পূর্বে আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজের মত প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাব পড়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রাজ্য সরকার শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। জেলা শাসক, পুলিশ সুপার, SDO এবং BDO-দের উপর বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।
১২ লক্ষ উপভোক্তার মধ্যে টাকা বিতরণ শুরু
মঙ্গলবার থেকে আবাস যোজনার আওতায় ১১ লক্ষ উপভোক্তা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আরো ১ লক্ষ উপভোক্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম কিস্তি হিসেবে প্রত্যেক উপভোক্তা সরাসরি অর্থ তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে পেয়ে গেছেন। এই অর্থ দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে হলে প্রথম কিস্তির অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের প্রমাণ প্রদান করতে হবে।
চাহিদার তুঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী এবং রাজমিস্ত্রি
একসঙ্গে এত সংখ্যক বাড়ি তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ইট, বালি, সিমেন্টের চাহিদা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে বলে মনে করছে প্রশাসন। পাশাপাশি বাড়বে দক্ষ মিস্ত্রির চাহিদাও। এই পরিস্থিতিতে সরবরাহের ঘাটতিও দেখা দিতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্মাণ সামগ্রী মজুদ রাখার দায়িত্ব জেলা শাসকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘরের টাকা পেতে কীভাবে আবেদন করতে হবে? এইসব কাগজপত্র থাকলেই হবে
প্রশাসনের নির্দেশ
তবে প্রশাসন আশঙ্কা করছে যে, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মিস্ত্রি এবং নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে উপভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করছেন। এর ফলে প্রকল্পের স্বচ্ছতায় প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই জেলা প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকারের আবাস যোজনা প্রকল্পের লক্ষ্যই হল উপভোক্তাদের সরাসরি অর্থ প্রদান করে বাড়ি তৈরির স্বপ্ন পূরণ করা। তবে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে প্রশাসনের এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।