অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে দিদির শপথ নামে ইস্তেহার প্রকাশ করেছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, অলচিকি ও নেপালি ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য এবারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অসম, মেঘালয় ও উত্তরপ্রদেশে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল।
দিদির শপথে মোট ১০ টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। যার অনেকগুলিতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বর্তমানে প্রচলিত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির ছোঁয়া আছে।
দিদির ১০ শপথে কী কী রয়েছে?
(১) ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প নিয়ে বিরাট স্বপ্নের ফেরি করা হয়েছে তৃণমূলের ইস্তেহারে। বলা হয়েছে, সকল জব কার্ড হোল্ডারকে কাজ দেওয়া হবে। দেশের সকল জব কার্ড হোল্ডার দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি পাবেন।
(২) দেশজুড়ে প্রত্যেকের মাথার উপর ছাদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পাকা বাড়িতে বসবাস করতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে বলে তৃণমূলের দাবি।
(৩) উজ্জ্বলা যোজনাকে ছাপিয়ে গিয়ে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বিরাট চমকের ঘোষণা আছে তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তেহারে। সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলিকে বছরে ১০ টি করে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। একটা টাকাও এর জন্য খরচ করতে হবে না।
(৪) তপশিলি জাতি, উপজাতি, বেকার, অনগ্রসর শ্রেণি প্রত্যেকের ভাতা এবং উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি বাড়ানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ৬০ বছর বয়স হলেই প্রত্যেকে বার্ষিক ১২,০০০ টাকা করে বার্ধক্য ভাতা পাবেন, এই কথা বলা হয়েছে তৃণমূলের ইস্তেহারে।
(৫) কৃষকদের জন্য স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তৃণমূল। তারা জানিয়েছে, কৃষি কাজে মোট খরচের উপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ দাম দিয়ে ফসল কেনা হবে কৃষকদের থেকে।
(৬) বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া-কমার কমার উপর ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে খুচরো পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়া-কমা নির্ভর করে। বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে এই এই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে ‘এনার্জি স্টেবিলাইজেশন ফান্ড’ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তৃণমূল।
(৭) তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত সকল স্নাত ও ডিপ্লোমা প্রাপ্তদের এক বছরের বিনামূল্যে শিক্ষানবিশির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে দেওয়া হবে বিশেষ বৃত্তি।
(৮) আইন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে তৃণমূল তাদের ইস্তেহারে জানিয়েছে, সিএএ ও এন আর সি আইন বাতিল করা হবে। সেইসঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি দেশজুড়ে লাগু করা হবে না বলেও তারা জানিয়েছে।
(৯) সর্বভারতীয় স্তরেও কন্যাশ্রী প্রকল্প চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই সঙ্গে আয়ুষ্মান ভারত যোজনা বন্ধ করে উন্নত স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প গোটা দেশ জুড়ে চালু করা হবে বলে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। তাতে বিমার অঙ্ক প্রতিটি পরিবারের জন্য বাড়িয়ে বছরে ১০ লক্ষ টাকা করা হবে।
আরো পড়ুন: মোবাইলের ১০,০০০ টাকা তো দিচ্ছেই! এবার ১৮,০০০ দেবে সরকার
(১০) তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে তারা বাংলায় কোন জোটে নেই তবে সর্বভারতীয় স্তরে নিজেদের ইন্ডিয়া জোটের সঠিক বলেই দাবি করেছে। সেই সঙ্গে তারা এও বলেছে, বিজেপিকে হারিয়ে যদি ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তবে তাদের দেওয়া এই দশ দফা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে তৃণমূল।