রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য পশ্চিমবঙ্গের নতুন বাজেট পেশ করেছেন। এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তৃতীয়বার মেয়াদের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এই বাজেটে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মুখ্য হাইলাইটস
২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের নতুন বাজেটে প্রধান প্রধান যে পরিবর্তনগুলি আনা হয়েছে সেগুলি হল-
বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বরাদ্ধ বৃদ্ধি
বাংলায় বাড়ি প্রকল্পে ৯৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখনও রাজ্যের ১৬ লক্ষ পরিবার উপকৃত হবে। পূর্ববর্তী পর্যায়ে এই প্রকল্পে ৭২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।
ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা
রাজ্যের সরকারি কর্মীদের দারুন সুখবর দিয়েছে এই নতুন বাজেট। সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ১৪ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন। নতুন ঘোষণা কার্যকর হলে ডিএ হবে ১৮%।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এবং গঙ্গাসাগর সেতু
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। একই সঙ্গে গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে আনুমানিক খরচ হবে ১৫০০ কোটি টাকা।
কৃষিখাতে বিশেষ উদ্যোগ
ধান কেনার জন্য রাজ্যে নতুন প্রকিউলেমেন্ট সেন্টারে স্থাপন করা হবে, যার জন্য ২০০কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৫০টি সুফল বাংলা স্টল তৈরির জন্য আরো ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ
স্কুল শিক্ষা দপ্তরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪১১৫৩.৭৯ কোটি টাকা এবং উচ্চশিক্ষা দপ্তরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬৫৯৩.৫৮ কোটি টাকা। ঐক্যশ্রী, সবুজসাথী, শিক্ষাশ্রী সহ অন্যান্য প্রকল্পের জন্যেও ব্যয় করা হবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা।
গ্রামীন রাস্তা উন্নয়নে উদ্যোগ
এই সমস্ত উদ্যোগের পাশাপাশি ৩৭ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের জন্য ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অগ্রগতি
রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আয়তায় ২.৪৫ কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই উপকৃত হয়েছেন। এই প্রকল্পে এখনো পর্যন্ত ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে। এখনও পরিসর করা হবে এই প্রকল্পকে।
নতুন উদ্যোগ: নদী বন্ধন প্রকল্প
নদী ভাঙ্গন রোধ করতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের জন্য ৭৮৬.৮ কোটি টাকা এবং উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য ৪৬৬.২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কর্মসংস্থান এবং ডিজিটাল উদ্ভাবন
এছাড়া নিউ টাউনের সিলিকন ভ্যালিতে ৭৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফে। লেদার কমপ্লেক্সে লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্মার্টফোন প্রদান
৭০ হাজার আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের স্মার্ট ফোন দেওয়ার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।
আরও পড়ুন: রাজ্যের বাজেটে একধাক্কায় ৮% ডিএ বাড়ছে, দারুণ সুখবর দিল মমতা সরকার
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বাজেটকে বেকার বিরোধী এবং উন্নয়নহীন বলে আক্রমণ করেছেন। তিনি দাবি করছেন যে, বাজেটে কর্মসংস্থানের কোন রকম দিশা নেই। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এবং গঙ্গাসাগর সেতুর বরাদ্দকে তিনি ভোটমুখী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের এই বাজেটকে কর্মসংস্থান ও উন্নয়নমূলক উদ্যোগের প্রতি মনোযোগী বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও বিরোধীরা বাজেটের দিশাহীনতা নিয়ে নানারকম প্রশ্ন তুলছে। রাজ্যের সাধারণ মানুষ এখন এই বাজেট বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।