ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এবার একসঙ্গে অনেকগুলি পরিবর্তন আনছে। আর যার মধ্যে অন্যতম হল গোল্ড লোন (RBI Gold Loan) সংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন। রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা সম্প্রতি জানিয়েছেন, ব্যাংক এবং এনবিএফসি সংস্থাগুলির একতরফা গোল্ড লোন প্রদানের ব্যবস্থাকে ঘিরে উদ্বেগ দিনের পর দিন বাড়ছে। আর সেই কারণেই এবার এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে আরো স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকিমুক্ত লেনদেন করা যায়।
রিজার্ভ ব্যাংকের মূল বক্তব্য
গোল্ড লোন বর্তমান সময়ে দেশের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিন্মবিত্ত পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে, ঋণগ্রহীতা সময়মতো ঋণ পরিষদের ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে গয়না মুক্ত করা আর সম্ভব হচ্ছে না। আর এভাবেই ব্যাংক এবং এমবিএফসি সংস্থাগুলোর কাছে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে এবার রিজার্ভ ব্যাংক ইএমআই ভিত্তিক পরিষেবা চালু করেছে।
ইএমআই পদ্ধতির সূচনা
এখনো পর্যন্ত গোল্ড লোনে “বুলেট রেপেমেন্ট” মডেল চালু ছিল। অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা প্রতিমাসে কেবল সুদের হার দিত এবং মূল ঋণ পরিশোধ করতে হত মেয়াদের শেষে। এবার এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে হোম বা গাড়ি লোনের মত মাসিক কিস্তিতে লোন পরিশোধের নিয়ম চালু করা হচ্ছে।
স্বচ্ছ মূল্যায়ন এবং নীতিগত কিছু নিয়ম
সম্প্রতি একটি খসড়া অনুযায়ী, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকে স্পষ্টভাবে সোনার বিশুদ্ধতা যাচাই, ট্রেডের ব্যবহার এবং পরিষেবা ক্ষমতার ভিত্তিতে ঋণ মঞ্জুর করা হবে। অর্থাৎ, যাকে তাকে এবার থেকে আর লোন দেওয়া যাবে না।
সোনাভিত্তিক বিপরীতে অগ্রিম বন্ধ হবে
রিজার্ভ ব্যাংকের আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত হল সোনার উপর বা এই ধরনের কোন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে অগ্রিম মঞ্জুর বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
বিতর্কিত মালিকানার সোনা গ্রহণযোগ্য নয়
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিতর্কিত বা পূর্বে বন্ধক সোনা যদি ছাড়াতে না পারে, তাহলে সে আর ঋণ পাবে না।
কেন এত কড়া হচ্ছে আরবিআই?
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক একাধিকবার গোল্ড লোন ব্যবহারের দুর্বল দিকগুলি তুলে ধরেছে। ঋণের মূল্যায়ন, সোনার মূল্য নির্ধারণ, ব্যবহারিক পর্যবেক্ষণে তাদের বিষয়গুলি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সোনার দামের ওঠানামার কারণে অনেক সময় গ্রাহক লোকসানের মুখে পড়েন। ফলে সংস্থাগুলিরও ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুন: এক রিচার্জেই নির্ঝঞ্ঝাট ফোন চলবে ১৪ মাস! BSNL-র অফারে ঘুম উড়ল জিও, এয়ারটেলের
সাধারণ মানুষের উপর কী প্রভাব আসতে পারে?
বেশ কিছু সূত্র দাবি করছে, ইএমআই চালু হলে মাসে মাসে ছোট কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা এবার খুব সহজ হবে। সোনার দামের পরিবর্তন ঋণ প্রদানের অনিশ্চয়তাকে আরো কমাবে। এছাড়া ঝুঁকি কমবে। ফলে ঋণ থেরাপি হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। শুধু তাই নয়, স্বচ্ছতা বাড়বে। ফলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে, তাদের গয়না দিয়ে আদৌ কতটা পরিমাণে ঋণ পাওয়া যাবে।
সোনা বন্ধক দিয়ে লোন নেওয়া, বহু মানুষের কাছে শেষ ভরসা। আর সেই ভরসা যাতে সমস্যায় পরিণত না হয়, সেদিকেই এবার পা বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। ইএমআই পদ্ধতির মত নিয়ম চালু করা হলে সাধারণ মানুষের জন্য এটি বড় সুবিধা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।