রাজ্যে এসএসসি কাণ্ডে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি হারানোর পর রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার একেবারে টালমাটাল অবস্থা। আর এদিকে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী গত ৩০ এপ্রিল থেকে সমস্ত রাজ্যে গরমের ছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে।
তবে সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত যে কবে স্কুল খুলবে, সে বিষয়ে মুখ খোলেনি রাজ্য সরকার। আর স্কুল খোলার এই অনিশ্চয়তা ঘিরেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের মধ্যে।
ঘোষণার আগেই ছুটি
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, চলতি বছরে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গরমের ছুটি পড়ার কথা ছিল। তবে সেই ঘোষণার বদলে আগেভাগেই ৩০ এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেভাবে হঠাৎ বৃষ্টির দাপটে তাপমাত্রা কমে এসেছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে যে, এত আগে ছুটির সিদ্ধান্ত কি সত্যিই রাজ্য সরকার ভেবেচিন্তে নিয়েছিল?
এখন অভিভাবরা চিন্তায় চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘ এই গরমের ছুটিতে তারা সিলেবাস কীভাবে শেষ করবে! বিশেষ করে যারা আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে, তাদের তো পড়াশোনার প্রচুর ক্ষতি হবে। কারণ নতুন নিয়ম অনুযায়ী তৃতীয় এবং চতুর্থ সেমিস্টারের উপর ভিত্তি করেই উচ্চমাধ্যমিকে বসা যাবে।
আর সেপ্টেম্বর মাসে তৃতীয় সেমিস্টার পরীক্ষার সময়সীমা মাথায় রেখে এখন প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। অথচ ক্লাস না হলে ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে তাদের সিলেবাস শেষ করবে এবং প্রস্তুতিই বা কীভাবে নেবে!
শিক্ষা দপ্তরের নীরবতা
সরকারিভাবে ছুটির ঘোষণা করলেও স্কুল কবে খুলবে তা নিয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট বার্তা দেয়নি রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন যে, আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে আবহাওয়ার তো ইতিমধ্যেই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
এমনকি শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, পড়ুয়ারা প্রতিদিন জানতে চাইছে, স্কুল কবে খুলবে? আমাদের কাছে এর কোনও উত্তর নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্কুলের প্রতি মানুষের ভরসা দিনের পর দিন কমে যাবে। এমনিতেই স্কুলে শিক্ষক কম, তার উপর ক্লাস হচ্ছে না, সিলেবাস শেষ হচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে বেসরকারি স্কুলের দিকেই সবাই পা বাড়াবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
এমনিতেই রাজ্যের অনেক স্কুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নেই। আর তার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য গরমের ছুটি যেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভরাডুবির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ছোটদের জন্য ছুটি হলে তো আনন্দ, কিন্তু বড়দের জন্য এই টানা ছুটিতে পড়াশোনার ক্ষতির সাথে সাথে ভবিষ্যতের জন্যও দুশ্চিন্তা।
আরও পড়ুন: ATM এর নতুন নিয়ম! PNB, SBI, HDFC যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেই জানুন
ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অভিভাবক, সকলের মনেই এখন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, কবে স্কুল খুলবে? আর এই প্রশ্নের উত্তর যতদিন না পাওয়া যাচ্ছে, ততদিন রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার ছাপ থেকেই যাবে।