ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল ভিত্তি হল ভোট। আর সেই ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিবছর নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা (Voter List) সংশোধন করা হয়। তবে এবার সংশোধন নিয়ে দেখা যাচ্ছে বিতর্ক। আর তাতেই স্পষ্ট মত প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া একটি হলফনামায় কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড এবং রেশন কার্ড, এই তিনটি নথির উপর আর ভরসা করা যাবে না।
সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে, তাহলে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব হারাবে না। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে সংশোধন হবে? আর কেনই বা নথিগুলিকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে? চলুন বিস্তারিত জানিয়ে দিচ্ছি আজকের প্রতিবেদনে।
আধার কার্ড পরিচয়ের প্রমাণ, কিন্তু নাগরিকত্বের নয়
আধার কার্ড নিয়ে বহু মানুষ ভাবে যে, এটি হয়তো সবকিছুর মূল চাবিকাঠি। কিন্তু কমিশন সেই ভাবনাকে ভুল বলেই উড়িয়ে দিয়েছে। আধার কার্ড পরিচয় নিশ্চিত করে অবশ্যই, কিন্তু নাগরিকত্ব নয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে ইস্যু হওয়া আধার কার্ডে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে যে, এটি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
আর এই যুক্তিকে আরো জোরদার করতে কমিশন কলকাতা এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের পুরনো নির্দেশনাও তুলে ধরেছে। আদালত একাধিক বার বলেছে যে, আধার কার্ড এককভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না।
রেশন কার্ড নিয়েও উঠছে প্রশ্ন
প্রসঙ্গত রেশন কার্ড বহু মানুষের কাছে পরিচয় বা ঠিকানার প্রমাণপত্র। কিন্তু কমিশন মনে করছে যে, দেশে বহু জাল বা ভুয়ো রেশন কার্ড ইস্যু হচ্ছে। ফলে আর এটিকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে মানা যাবে না। তাই এই নথিকেও সরাসরি আর গ্রহণ করা যাবে না।
কিন্তু কমিশন বলেছে, যদি কেউ রেশন কার্ডসহ অন্য নথি জমা দেয়, তাহলে তা কমিশনের আধিকারিকরা বিবেচনা করবে। কিন্তু সেই নথি গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। সেগুলো নির্ধারণ করা হবে তথ্য যাচাইয়ের ভিত্তিতে এবং সংশ্লিষ্ট আইন মেনেই।
আরও পড়ুন: দুয়ারে সরকারের পর এবার “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান!” কী কী সুবিধা মিলবে দেখে নিন
কেন এই বিতর্ক?
আসলে সম্প্রতি বিহারে ভোটার তালিকা সংরক্ষণের কাজ চলছে। আর সেখানে নাগরিকদের নিজের এবং বাবা-মায়ের জন্ম সার্টিফিকেট জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেকের পক্ষেই এই ডকুমেন্ট জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বেশ কিছু মামলাকারী সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। গত ১০ জুলাই শীর্ষ আদালত এই সংক্রান্ত সংশোধন প্রক্রিয়া বন্ধ না করে কমিশনকে ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে, ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া মানেই যে সেই ব্যক্তি নাগরিক নয়, এমনটা না। বরং শুধুমাত্র ভোটাধিকার পাবে না। এছাড়া কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রত্যেকটি জমা দেওয়া নথি পরীক্ষা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কোন নথি গ্রহণযোগ্য, আর কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়।