এক রায়ের মাধ্যমে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষের জীবন যেন আচমকা থমকে গিয়েছে। হ্যাঁ, গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট এমন এক রায় দিয়েছে, যা রাজ্যের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিকাঠামোতে বিরাট পরিবর্তন আনতে চলেছে।
এদিন হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ২০১০ সালের পর রাজ্য সরকার যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC Certificate) ইস্যু করেছে, তা আর কোনভাবেই বৈধভাবে গণ্য করা হবে না। আর সংখ্যাটিও একেবারে কম নয়। প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই তালিকায় পড়ছে।
সুপ্রিম কোর্ট কেন এই রায় দিল?
আসলে সবকিছুর মূলে রয়েছে এক জনস্বার্থ মামলা। প্রশ্ন উঠেছিল, ২০১০ সালের পর যে সমস্ত সম্প্রদায়কে ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, তারা কি আদৌ সংবিধান সম্মত? আর হাইকোর্ট বলেছে, এই তালিকায় যথেষ্ট সচেতনতার অভাব ছিল। অনেক সম্প্রদায়কে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধে দেওয়ার জন্য ওবিসি তালিকায় নেওয়া হয়েছিল।
এমনকি এই তালিকায় বেশ কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় গোষ্ঠীরাও যুক্ত হয়ে পড়ে, যা সংবিধানের মূল আদর্শের বিরুদ্ধে। আর এর ফলে ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪২ টি নতুন শ্রেণীকে ওবিসি ঘোষণা করা হয়েছিল। আর সেই সিদ্ধান্ত এখন পুরো বাতিল হয়ে গিয়েছে।
কারা এই তালিকায় পড়বেন?
এই রায়ের প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের উপরে, যারা ওবিসি সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি এবং শিক্ষার সুবিধা নিয়েছেন বা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
তবে যারা ইতিমধ্যেই সরকারি চাকরি বা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন, তাদের উপর এই রায়ের কোনরকম প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে ওই সার্টিফিকেট হয়তো আর ব্যবহার করা যাবে না।
আরও পড়ুন: ২০০ টাকার কমে সেরা পাঁচটি রিচার্জ প্ল্যান, মিলছে ভরপুর সব সুবিধা
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি এই রায় কোনভাবেই মানেন না। এমনকি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে একটি রায়, যার মাধ্যমে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষদের অধিকারকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে বিজেপি সরকারের নেতারা এই রায়কে সাংবিধানিক মর্যাদা রক্ষার পদক্ষেপ বলে বিবেচিত করছে। তারা দাবি করছে যে, রাজ্য সরকার ভোট ব্যাংকের স্বার্থে অযোগ্য সম্প্রদায়কে এই তালিকায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে।