পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দপ্তর নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, রেশন কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নাম্বার লিঙ্ক করা না থাকলে এবার থেকে আর রেশন তোলা যাবে না। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে সাধারণ মানুষ এবং রেশন ডিলারদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকের মনে প্রশ্ন, মোবাইল ফোন না থাকলে কি কাউকে রেশনের মতো সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে?
দুর্নীতি রোধে খাদ্য দপ্তরের পদক্ষেপ
খাদ্য দপ্তরের মতে এই নতুন নিয়ম চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য হল রেশন সামগ্রী বেহাত হওয়া থেকে আটকানো। কার্ডধারীদের মোবাইল নাম্বার রেশন কার্ডের সঙ্গে যদি লিংক করা থাকে তাহলে কেউ রেশন তুললেই একটি সতর্কবার্তা মেসেজ গ্রাহকের মোবাইলে চলে যাবে। এতে অন্য কেউ রেশন তুলে নিলেও আসল গ্রাহক তাৎক্ষণিক বিষয়টি জানতে পারবে।
খাদ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যের প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ পরিবারের মধ্যে ১ কোটি ৩২ লক্ষ্য পরিবারের মোবাইল নাম্বার ইতিমধ্যেই রেশন কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা হয়েছে। তবে এখনো প্রায় ১ কোটি ৫৮ লক্ষ পরিবার মোবাইল নম্বর লিঙ্ক করেনি।
রেশন নিয়ে কী নতুন নিয়ম?
খাদ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজন সদস্যের মোবাইল নাম্বার বাধ্যতামূলকভাবে পোর্টালে নথিভুক্ত করতে হবে। রেশন তোলার সময় গ্রাহকের মোবাইল নাম্বার ই-পস (e-POS) মেশিনে নথিভুক্ত করবেন ডিলাররা।
মোবাইল নাম্বার সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী হল-
- একটি নাম্বার শুধুমাত্র একটি পরিবারের জন্যই ব্যবহৃত হবে।
- ডিলার বা তাদের পরিবারের সদস্যদের মোবাইল নাম্বার কোন গ্রাহক ব্যবহার করতে পারবে না।
গ্রামীণ অঞ্চলে সমস্যার মুখোমুখি ডিলাররা
ডিলারদের অভিযোগ, গ্রামীণ এলাকায় অনেকেরই মোবাইল ফোন নেই। যারা ফোন ব্যবহার করেন না তাদেরকে কীভাবে রেশন প্রদান করা হবে তা স্পষ্ট নয়। এর ফলে গ্রাহকরা ডিলারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানান,
“খাদ্য দপ্তরের কিছু অফিসার অবাস্তব নিয়ম চালু করতে চাইছেন। এটি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য নয়, ডিলারদেরও ভোগান্তির কারণ হচ্ছে। আইনের কোথাও বলা নেই যে, রেশন সামগ্রী পেতে মোবাইল নাম্বার থাকতেই হবে”।
আরও পড়ুন: ১৪ ডিসেম্বর লাস্ট ডেট ছিল! আবারো আধার কার্ডের এই কাজের জন্য তারিখ বাড়ালো সরকার
আইনি বিতর্ক ও সুপ্রিম কোর্টের রায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে যে রেশন একটি মৌলিক অধিকার এবং কাউকে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার কোন অধিকার নেই। মোবাইল ফোনের অভাবে রেশন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেক গ্রাহক।
নতুন নিয়ম কার্যকর হলে রেশন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা হবে বলে খাদ্য দপ্তর দাবি করছে। তবে গ্রামীণ এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের কাছে মোবাইল নাম্বার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট বিতর্কিত। এই বিষয়ে সরকার এবার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটাই দেখার।