বর্তমান সময়ে ওষুধের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। সুগার, প্রেসার, থাইরয়েডের মত দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে গড়ে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয় সাধারণ মানুষকে।
এই পরিস্থিতিতে মানুষ সস্তায় ওষুধ পাওয়ার আশায় দোকানে দোকানে ঘুরতে বাধ্য হন। সাধারণ মানুষের এই সমস্যা দূর করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে।
ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালে মিলবে ফেয়ার প্রাইস ওষুধ
২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্যের মেডিকেল কলেজ এবং জেলা হাসপাতালগুলোতে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হয়েছিল। এই উদ্যোগ মধ্যবিত্ত সমাজের অনেকটাই আর্থিক স্বস্তি দিয়েছিল। তবে গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে এই সুবিধা না থাকায় অনেক গরিব মানুষ ওষুধ কিনতে সমস্যার মুখে পড়ছেন।
তাদের কথা মাথায় রেখে এবার রাজ্যের ৩৪৭ টি ব্লক এবং গ্রামীন হাসপাতালে ন্যায্য মুল্যের ওষুধের দোকান চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। ফলে রাজ্যে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৬০ টিরও বেশি।
স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা
স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী বর্তমানে বাংলায় মেডিকেল কলেজ ও জেলা মহকুমা হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ১১৭টি ফেয়ার প্রাইস ওষুধের দোকান রয়েছে। এগুলি বেশিরভাগই বেসরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। সম্প্রতি নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে রাজ্যে।
ইতিমধ্যে ১০৫টি ওষুধের দোকানের জন্য নতুন সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাকি ১২টি দোকানের টেন্ডার প্রক্রিয়া খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, “রাজ্যের সব ব্লক হাসপাতালেই ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হবে। গুণমানের ক্ষেত্রে কোন রকম আফসোস করা হবে না। টেন্ডার প্রক্রিয়া খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে।”
৫০ শতাংশ বা তার বেশি ছাড়ে ওষুধ
ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালে এই নতুন ন্যায্য মুল্যের ওষুধের দোকান চালু হলে রোগীরা ওষুধের উপর কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ছাড় পাবেন। কিছু নির্দিষ্ট ওষুধে ছাড়ের পরিমাণ ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। যদিও ছাড়ের হার নির্ভর করবে ওষুধের ধরন এবং প্রয়োজনীয়তার উপর। তাই এই উদ্যোগ গরিব এবং মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য পরিষেবায় বড় পরিবর্তন, আভা আইডি ছাড়া মিলবে না চিকিৎসা, জানুন কীভাবে করবেন রেজিস্ট্রেশন
সাধারণ মানুষের উপকার
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের মধ্যবিত্ত এবং গরীব শ্রেণীর মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে বড় আর্থিক সাশ্রয় পাবেন। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত এবং নিয়মিত ওষুধের প্রয়োজন হয় তাদের জন্য এই উদ্যোগ খুবই উপকারী হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।