পশ্চিমবঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্যের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। প্রায়শই অন্যায্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে, কিছু বিভাগের কর্মচারীরা অন্যদের তুলনায় ভালো সুযোগ-সুবিধা এবং পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন। এই বিষয়টি রাজ্য সরকার এবং কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে এবং এটি সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছেছে। এখন, রাজ্য সরকার এই উদ্বেগগুলি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ করছে।
বৃহস্পতিবার নবান্নে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে বৈষম্যের অভিযোগের সমাধান খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার এই কমিটি গঠন করেছে বিশেষভাবে এই বিষয়টি সমাধানের জন্য।
সমস্যাটি কী?
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মচারীরা প্রায়শই মনে করেন যে অসম আচরণ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সচিবালয় বা নির্দিষ্ট অফিসের কর্মচারীরা অতিরিক্ত সুবিধা পান এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠেছে, যারা মনে করেন যে একই যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সাথে অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে।
মূল সমস্যা হল পদোন্নতি ব্যবস্থা। সচিবালয়ে কর্মরত কর্মচারীরা, বিশেষ করে নিম্ন ডিভিশন ক্লার্কদের মতো নিম্ন পদে কর্মরতদের, বিশেষ সচিবের মতো উচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে, অন্যান্য বিভাগের কর্মীরা, যেমন অধিদপ্তর বা আঞ্চলিক অফিসের কর্মীদের, এই সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও, তাদের কেবলমাত্র প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে, যা সচিবালয়ে তাদের সমকক্ষদের তুলনায় অনেক ছোট পদ।
রাজ্য সরকারের সমাধান
এই সমস্যা সমাধানের জন্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সভাপতিত্ব করছেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, গণপূর্ত বিভাগ এবং অর্থ ও কর্মী বিভাগের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
আরও পড়ুন: মাসে ১৫০০ টাকা, লক্ষীর ভান্ডারের মতোই দেবে সরকার, বেকার হলেই আবেদন করুন
এই কমিটি বৈষম্য দূর করার এবং সকল সরকারি কর্মচারীর জন্য একটি ন্যায্য পদোন্নতি এবং সুবিধা ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে একটি সমাধানের খসড়া তৈরির উপর আলোকপাত করা হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে সমস্ত কর্মচারী, তাঁরা যে বিভাগেই কাজ করেন না কেন, তাঁদের ক্যারিয়ার বৃদ্ধি এবং পদোন্নতির জন্য সমান সুযোগ রয়েছে।
বলা বাহুল্য, সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে এবং কর্মচারীরা আশাবাদী যে নতুন পরিকল্পনাটি রাজ্যের কর্মীদের মধ্যে ন্যায্যতা এবং সমতা আনবে। বৃহস্পতিবার নবান্নে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ফলাফলের জন্য পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সরকারি কর্মচারীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন।