মুরারই-২ ব্লকের আমডোল পঞ্চায়েতের উত্তর রামচন্দ্রপুর গ্রামে সরকারি আবাস যোজনা তালিকা নিয়ে অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। মাটির বাড়িতে বসবাস করেও এই গ্রামে ১৫০ টি পরিবার সরকারি আবাস যোজনা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
এদিকে যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে কিংবা আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের নাম বাংলা আবাস যোজনা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং তারা এই প্রকল্পের অধীনে পাকা বাড়ি পাচ্ছে। এই অসঙ্গতির প্রতিবাদে গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলি বিডিও অফিসে লিখিত আবেদন জমা করেছে। তাদের সেই আবেদন কপি পাঠানো হয়েছে জেলা শাসকের কাছেও।
সংশ্লিষ্ট গ্রামের চিত্র
পাগলা নদীর ধারে অবস্থিত উত্তর রামচন্দ্রপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষই দিনমজুর। বেশিরভাগ মানুষের বাড়ি মাটির তৈরি। বর্ষার সময় ত্রিপল দিয়ে কোনোভাবে মাথা গোজার জায়গা তৈরি করেছেন তারা। প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে প্রশাসন থেকে ত্রিপল সরবরাহ করা হয়। তবে তা সাময়িক ভরসা যোগায়। কিন্তু এই মাটির বাড়িতে থাকা তাদের পক্ষে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় তাদের দুর্ভোগ চরম শীর্ষে পৌঁছায়।
আবাস যোজনা তালিকায় অসংগতি
২০২২ সালে এই গ্রামে দুঃস্থ পরিবারগুলি সরকারি পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এই বছর নতুন সার্ভেতে মাত্র ৪৩ জনের নাম এই তালিকায় এসেছে। অভিযোগ উঠেছে যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাদের নামও এই তালিকায় রয়েছে।
অথচ যারা গ্রামের প্রকৃত দরিদ্র মানুষ, যারা এখনো মাটির বাড়িতে থাকেন তাদের নাম এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তারা ১৫০ জন পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। তাদের বেশিরভাগই মাটির বাড়িতে থাকে। অথচ তালিকায় রয়েছে এমন অনেকের নাম যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে।
নতুন সার্ভের ঘোষণা
পঞ্চায়েত প্রধান নাজিমুদ্দিন শেখ এই তালিকা নিয়ে বিডিওকে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। বিডিও অফিসার মিন্টু ঘোষাল জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর একটি পুনরায় সার্ভে করা হবে। এই সার্ভেতে পাকা বাড়ি অর্থাৎ আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে এবং প্রকৃত দরিদ্রদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হবে এবং অযোগ্যদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে
কিভাবে আবাস যোজনা প্রকল্পে আবেদন করবেন?
বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার জন্য ২ রকম ভাবে আবেদন করা যায়।
- অফলাইন এবং
- মুখ্যমন্ত্রীদের হেল্পডেস্কের মাধ্যমে সরাসরি আবেদন।
অফলাইনে আবেদন
বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে আবেদন করার নির্দিষ্ট কোন আবেদন ফর্ম নেই। যারা এই প্রকল্পের শর্তাবলী মেনে বাড়ি পাওয়ার যোগ্য, তারা সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখে ব্লক উন্নয়ন অফিসে জমা দিতে পারেন। কিন্তু দরখাস্তের সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা করতে হবে। এছাড়া দরখাস্তে নিজের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এবং বাড়ির প্রয়োজনীয়তার কারণ উল্লেখ করতে হবে।
দরখাস্তের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
অফলাইনে আবেদন করার জন্য দরখাস্তের সঙ্গে যে ডকুমেন্টগুলি প্রয়োজন, সেগুলি হল-
- বর্তমান বাড়ির রঙিন ছবি,
- আধার কার্ডের জেরক্স কপি,
- রেশন কার্ডের জেরক্স কপি,
- ব্যাঙ্ক পাসবুকের জেরক্স কপি,
- জমির রেকর্ডের জেরক্স কপি
- মুখ্যমন্ত্রীর হেল্প ডেস্কে সরাসরি আবেদন
আপনি অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে না চাইলে সপ্তাহের সোমবার থেকে শনিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী হেল্পডেস্কে ফোন করে আবেদন করতে পারেন।
এই হেল্পডেস্কের যোগাযোগ নম্বর- ৯১৩৭০৯১৩৭০। এই নম্বরে ফোন করে আবেদনের সমস্ত তথ্য প্রদান করতে হবে এবং আপনি যদি যোগ্য হন তাহলে আপনাকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসে সুবিধা প্রদান করা হবে।
স্ট্যাটাস কিভাবে চেক করবেন?
পশ্চিমবঙ্গ আবাস যোজনা প্রকল্পের স্ট্যাটাস চেক করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুন-
- সর্বপ্রথম বাংলা আবাস যোজনা অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান,
- এরপর “Know Your Grievance Status” অপশনে ক্লিক করুন,
- এরপর নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করুন।
বাংলা আবাস যোজনা শর্তাবলী
বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সেই শর্তগুলি হল-
- পরিবারের যদি কোন অকৃষি প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে সেই পরিবার এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেনা,
- পরিবারের কোনো সদস্যের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার বেশি হওয়া যাবে না,
- পরিবার আয়কর প্রদান করলে আবাস যোজনার ঘর পাবে না,
- পূর্বে কোন আবাসন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে থাকলে এই প্রকল্পের সাহায্য পাবে না,
- পরিবারের কোনো পাকা বাড়ি থাকা যাবে না,
- পরিবারের কোনো সদস্য সরকারি কর্মকর্তা হওয়া যাবে না,
- সেচযুক্ত ২.৫ একরের বেশি জমি থাকা যাবে না,
- সেচবিহীন ৫ একর বা তার বেশি জমি থাকা যাবে না,
- পরিবারের কোনো মোটর চালিত গাড়ি যা কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়, এমন গাড়ি থাকলে এই প্রকল্পের সহায়তা পাবে না,
- পরিবারের তিন চাকা বা চার চাকার গাড়ি থাকা যাবে না,
- পরিবারের কেউ ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করলে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেনা।
আরও পড়ুন: আবাস যোজনার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ! ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম কিস্তি সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে
আবেদন জমার পর বাড়ি পাওয়ার প্রক্রিয়া
যখন আপনি অফলাইন বা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী হেল্পডেস্কের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন তখন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা ব্লকের আধিকারিকরা আপনার বাড়িতে এসে সার্ভে করবেন। যদি আপনি আবেদন শর্ত অনুযায়ী উপযুক্ত হন, তাহলে আপনার নাম পরবর্তী সার্ভে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বর্তমানে যে সার্ভে প্রক্রিয়া চলছে তাতে নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। আগে থেকে তালিকাভূক্ত যারা রয়েছে তাদেরকে যাচাই করা হচ্ছে। নতুন আবেদনকারীদের জন্য ভবিষ্যতে নতুন সার্ভে হবে এবং তখনই তাদের বাড়িতে সরাসরি যাচাই করা হবে। যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আবেদনকারীকে যোগ্য হিসেবে নির্বাচিত করা হবে এবং তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা হবে বাড়ি তৈরির জন্য ও সরাসরি টাকা তাদের ব্যাংক একাউন্টে দেওয়া হবে।