হকারদের রাস্তা দখল নিয়ে নবান্নে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক থেকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে বসে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে তাঁর লক্ষ্য হকারদের সরানো নয়। কিন্তু দখলে কাজ হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে স্টলগুলো এখন গোডাউনে রূপান্তরিত হয়েছে। এইভাবে রাস্তায় বসে জীবিকা চালানোর অধিকার নেই। মানুষ পায়ে হেঁটে যাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না। দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই হকারদের ১ মাস দেওয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকবে। তবে নতুন কাউকে বসতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
ঠিক কী কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, সে যে দলেরই হোক না কেন। শহরের সৌন্দর্য বজায় রাখতে হবে। স্টল অ-দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি করা উচিত। প্রতিটি স্টলে নম্বর থাকবে। প্রতিটি হকার একটি মাত্র স্টল পাবেন।
বাজার তৈরি করবে সরকার
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাগরি মার্কেটে বারবার আগুন লেগেছে, যে কোনও সময় অনেক বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে, অনেক মার্কেট আছে, অনেকের জীবন বিপন্ন হতে পারে। অনেক বাড়িই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো মেরামত করান। তা না করতে পারলে সরকার আদালতে নিজে গিয়ে কিনে, সেখানে বাজার তৈরি করবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মাত্র 1.5 কোটি টাকা দিয়ে বাজার ভালো হয়ে যাবে। আমি একটি তহবিল তৈরি করতে পারি।
নেতা-পুলিশের উপর ক্ষুব্ধ মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘেরাও-পার্কিং নিয়েও বলেছেন, পুলিশ রাজনীতিবিদদের খাইয়ে অবৈধ পার্কিং জোন তৈরি করেছেন অনেকেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কত শিশু বেকার, তাদের চাকরি দিন। তাদের ইন্টার্নশিপ দিন। তারাই এসে রিপোর্ট করবে, কোথায় জল জমে, কোথায় আবর্জনা জমছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা জোর দিয়েছিলেন যে গড়িয়াহাটে হাঁটার জায়গা নেই। ফুটপাত দখল করা হয়েছে। এর জন্য আমাদের কাউন্সিলররা দায়ী। কাউন্সিলরদের প্রথম থেকেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু তাঁরা তা দেখেন না। পুলিশ, হকার নেতারা গরিব হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে। মুখ্যমন্ত্রী এমনটা করতে বারণ করে বলেছেন, লোভ কমাতে হবে। জীবন যাপনের জন্য যা প্রয়োজন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, যে কোনও পুলিশকর্মীকে চাঁদাবাজি করতে দেখা গেলে অবিলম্বে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কাউকে ছাড়ব না।
রাজ্যের বড় বাজারের জন্য বড় পরিকল্পনা মমতার
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সমস্ত বড় বাজারের জন্য পরিকল্পনা করতে বলেছেন। তাঁর দাবি, বাজার এলাকার খুব কাছে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম রাখতে হবে। মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে যে সমস্ত এলাকায় অবৈধ দখল করা হয়েছে, সেখানকার কাউন্সিলরদের গ্রেফতার করা হবে। যত বড় নেতাই হোন না কেন তাঁকে রেহাই দেওয়া হবে না। ভালো কাজ করলে পুরস্কারও দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, গ্র্যান্ড হোটেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই কড়া। সেখানে বিদেশি তারকা ও অভিনেতারা আসেন। নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।
হকারদের জন্য দয়াশীল মমতা
মমতা জানিয়েছেন, রাস্তার বিক্রেতাদের দোষ দিয়ে কী লাভ, এটা আমাদের দোষ। নিউমার্কেট এলাকায় আমরা ভবন নির্মাণ করছি না কেন? হকাররা সেখানেই থাকবে। মমতা বলেন, কাউকে বেকার করার অধিকার আমাদের নেই। তবে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। আমি চাই না কারও ব্যবসা শেষ হোক। তবে এর বেশি সময় দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে, আমরা ইতিমধ্যে হকারদের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে সাধারণ মানুষও উপকৃত হয়। এ বিষয়ে আইনও করা হয়েছে। রাজ্যের হকারদের নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্যের 128টি শহুরে স্থানীয় সংস্থায় টাউন ভেন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। হকারদের নাম নিবন্ধন, সীমাবদ্ধ এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্ধারিত হকারদের পরিচয়পত্র প্রদানসহ সবকিছুই এই কমিটি দেখাশোনা করে।
এছাড়াও হকারদের বৈধভাবে বৈধতা দেওয়ার জন্য আইডি কার্ডও রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও, হকার জোনের জন্য জায়গা দেখতে বলা হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। মমতা নির্দেশ দিয়েছেন যে একটি পোর্টাল তৈরি করে, কোথায় হকাররা বসতে পারবেন, কোথায় হকাররা বসতে পারবেন না, সেসব তালিকা তৈরি করতে হবে।