নিজেদের গায়ে লাগা দুর্নীতির কলঙ্ক ঝাড়তে না পেরে এবার কি তবে বাম আমলকে ইচ্ছাকৃতভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে বর্তমান রাজ্য সরকার? রাজ্যের শিক্ষা দফতর যেভাবে ৩০ বছরের বেশি চাকুরিরত স্কুল শিক্ষকদের থেকে নানাবিধ নথিপত্র চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে এই প্রশ্ন প্রবল আকার ধারণ করছে।
কারণ আজ থেকে তিন দশক আগে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি যেমন আলাদা ছিল তেমনই সেই সময় এত রকম নথিপত্র সংরক্ষণের নিয়ম ছিল না। ফলে এই মুহূর্তে শিক্ষা দফতর যে সকল কাগজপত্র চাইছে স্কুলগুলোর কাছে, তাতে শেষ পর্যন্ত কতটা কী করে ওঠে যাবে তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
কলকাতা হাইকোর্ট কিছুদিন আগে রায় দিয়েছে, শুধু এসএসসি নয় তার আগে নিযুক্ত রাজ্যের স্কুলগুলির শিক্ষকদের যোগ্যতা সহ নানান নথিপত্র সরকারকে সংরক্ষণ করতে হবে। উল্লেখ্য বাম জমানায় স্কুল সার্ভিস কমিশন চালু হওয়ার আগে রাজ্য সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতির সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল। তখন মূলত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমেই শিক্ষক নিয়োগ হত। তবে তার জন্য ডিআই-এর ছাড়পত্র দরকার পড়ত। এই পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে মেধা তালিকা তৈরি এবং তা সংরক্ষণের দরকার পড়ত না।
অতদিন আগের শিক্ষকদের নথি চেয়ে পাঠানোয় কতগুলো সমস্যা এখনই নজরে এসেছে। প্রথম কথা, সেই সময়ের বেশ কিছু স্কুল উঠে গিয়েছে। তারপর অতদিন আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই অবসর নিয়ে নিয়েছেন চাকরি থেকে। ফলে তাঁদের যাবতীয় নথিপত্র জোগাড় করা অত্যন্ত কঠিন বর্তমান প্রধান শিক্ষকদের পক্ষে।
আরো পড়ুনঃ ভালোই আনন্দে ছিল সরকারি কর্মীরা, কিন্তু সরকারের এই নোটিশে আনন্দ মাটি হয়ে গেল
অনেকগুলো নথির সংরক্ষণের নির্দেশ না থাকায় তার বেশ কিছু জিনিস সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পাশাপাশি স্কুলগুলোও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেনি। এই পরিস্থিতিতে ২৭ মে-এর মধ্যে কীভাবে রাজ্য সরকারকে ৩০ বছরের বেশি কর্মরত শিক্ষকদের যাবতীয় নথি পাঠানো সম্ভব হবে তা নিয়েই বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন।
উল্লেখ্য রাজ্যের শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, তারা শিক্ষকদের এই সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করার পর তা খতিয়ে দেখে তারপর ডিজিটাইজ করবে। তবে রাজ্যের শিক্ষকদের একাংশ আরেকটি বিষয় নিয়ে শিক্ষা দফতরের দিকে আঙুল তুলেছে। তাদের বক্তব্য সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই সমস্ত নথি আছে, তাই প্রতি মাসে বেতন এবং অবসরের পর পেনশন দিতে পারছে। তাহলে নতুন করে আবার নথির চেয়ে হয়রানির মুখে ফেলার কারণ কী!
আরো পড়ুনঃ সিনিয়র সিটিজেন কার্ড করে দিচ্ছে সরকার! কী কী সুবিধা পাবেন জানুন, তারপর করুন
এদিকে এই মুহূর্তে স্কুলগুলোয় গরমের ছুটি চলায় অনেক শিক্ষক পরিবার নিয়ে বাইরে ঘুরতে চলে গিয়েছেন। তাঁরা কীভাবে ২৭ মে-এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের নথি পাঠাবেন তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাছাড়া এই মুহূর্তে স্কুলের ছুটি চলছে, ফলে প্রধান শিক্ষক’ই বা কী করে কী করবেন সেটাও পরিষ্কার নয়।