বাংলার সমাজ জীবন থেকে রাজনীতির ময়দান সর্বত্র কাঁপাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। গোটা দেশে আর কোনও সামাজিক প্রকল্প বোধহয় এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি যতটা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। মে মাস থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা (সাধারণ শ্রেণির মহিলারা পাচ্ছেন ১০০০ টাকা, আর SC-ST রা ১২০০ টাকা) করার পর সেই জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে এই দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই কেন্দ্রীয় সরকারও। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যেমন বাংলার ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলাদের দেওয়া হয়, তেমনই মোদি সরকার এই দুর্দান্ত প্রকল্প কম বয়সী মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছে। তাতে কম বয়সী মেয়েরা মাসে ১০০০ টাকা করে অনুদান পায়।
মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়াতে এবং তাদের আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করেছে মোদি সরকার। তাতেই কম বয়সী মেয়েরা এই অনুদান পাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে অনেকটা মিল আছে মোদি সরকারের বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের ব্যাপ্তী আরও বেশি। দেশের কন্যা সন্তানরা স্কুলে ভর্তি হলেই বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার টাকা পাওয়া শুরু করবে। মাধ্যমিক স্তর অর্থাৎ দশম শ্রেণি পর্যন্ত তারা কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের অধীনে বছর বছর আর্থিক অনুদান পাবে। এই আর্থিক অনুদানের সর্বোচ্চ সীমা বছরে ১,০০০ টাকা।
আরো পড়ুনঃ কবে খুলবে স্কুল? গরমের ছুটি কবে শেষ হচ্ছে? শিক্ষা দফতরের আপডেট
বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার বৈশিষ্ট্য
কেন্দ্রীয় সরকারের বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অনুদান পেতে হলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি হতে হবে। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরত মেয়েরাই একমাত্র এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অধীনে বছর বছর সাহায্য পাবে। তবে বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায় আর্থিক অনুদানের হার আলাদা আলাদা। অর্থাৎ যে শ্রেণিতে পড়বে কন্যা সন্তান সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে।
- প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বছরে ৩০০ টাকা।
- চতুর্থ শ্রেণিতে পাঠরত মেয়েদের বছরে ৫০০ টাকা।
- পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের বছরে ৬০০ টাকা।
- ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াদের বছরে ৭০০ টাকা।
- অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীদের বছরে ৮০০ টাকা।
- নবম ও দশম শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রীদের বার্ষিক ১,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে কেন্দ্রীয় সরকার।
বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার আর্থিক সুবিধা কারা পাবে?
দেশের মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের জন্য বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্প অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। তবে ভারতের সকল ছাত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে আর্থিক অনুদান পাবে তা কিন্তু নয়। এর জন্য কয়েকটি শর্ত আছে।
- কেবলমাত্র BPL পরিবারের কন্যা সন্তানরাই বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে আর্থিক অনুদান পাবে।
- কোনও বিপিএল পরিবারের সর্বোচ্চ দু’জন কন্যা সন্তান এই প্রকল্পের সুবিধে পাবে। যদি তার বেশি কন্যা সন্তান পরিবারে থাকে তবে সে এই প্রকল্পের আওতা থেকে বাদ পড়বে।
- বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায় আবেদনের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামাঞ্চলের ছাত্রীদের পৃথক পৃথক ফর্ম ভরতে হয়।
বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায় আবেদনের জন্য কী কী নথি প্রয়োজন?
- আবেদনকারীর অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর জন্ম শংসাপত্র
- পরিচয়পত্র (আধার/রেশন কার্ড)
- অভিভাবক-অভিভাবিকার ফটো আইডেন্টিটি প্রুফ (আধার কার্ড)
- পিতা-মাতার বাসস্থানের ডোমেশিয়াল সার্টিফিকেট
- কোন শ্রেণিতে পড়ে সেই সংক্রান্ত প্রমাণ। এক্ষেত্রে স্কুলের স্বাক্ষর প্রয়োজন
- রেশন কার্ডের প্রতিলিপি অবশ্যই লাগবে বিপিএল শ্রেণির অন্তর্গত কিনা তা প্রমাণের জন্য
আরো পড়ুনঃ ৫ কেজি না! এবার ১০ কেজি ফ্রি রেশন মিলবে, কবে থেকে পাবেন জানুন
বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায় কীভাবে আবেদন করতে হবে?
বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায় অনলাইন ও অফলাইন দু’ভাবেই আবেদন করা যায়। অনলাইন আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিষয়টি সারতে হবে। আর অফলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা ফর্ম পাওয়া যায়। তা বাড়িতে নিয়ে এসে যথাযথভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।