বাংলার ইতিহাসে এই প্রথম রাতারাতি ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি চলে গিয়েছে। যদিও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে আপাতত চাকরি বহাল থাকছে তাদের তবে আগামী দিনে যে এই তালিকা থেকে অযোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের চাকরি বাতিল হবে তা একরকম পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু এরই মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য তাই নিয়ে। কারণ একটা বিষয় পরিষ্কার, অযোগ্যদের জন্য অপরাধ না করেও শাস্তির মুখে যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা। তবে এবার যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বাছাই করতে এগিয়ে এসেছে SSC. স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে তারা যোগ্যদের বেছে নেবে।
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে যারা চাকরি পেয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে সেই প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই প্যানেলের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের একাংশকে এক মাসের মধ্যে সুদ সহ বেতনের টাকা ফেরতের নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট।
লোকসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের চাকরি বাতিলের এই নির্দেশ ব্যাপক ঝড় তুলেছে বাংলায়। সত্যি বলতে গত কয়েক বছর ধরে নিয়োগ দুর্নীতি বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলের নিয়োগ অর্থাৎ টেট দুর্নীতির মামলা সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
অপরদিকে এই এসএসসি দুর্নীতির মামলা একসময় সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে ছিল। তিনি গোটা প্যানেলটাই বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও শিক্ষকদের একাংশ সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যান।
আরো পড়ুনঃ গ্যাসের দাম আরো ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে যাবে, এইভাবে বুক করলেই
সেখানে একই রায় বহাল থাকলে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁরা জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সবপক্ষের মতামত না শুনেই রায় দিয়েছেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাটি আবারও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠায়।
সর্বোচ্চ আদালত মে মাসের মধ্যে এসএসসি দুর্নীতির মামলার শুনানি শেষ করে রায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সময়সীমার মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বর রশিদির বেঞ্চ সোমবার এই মামলার রায়দান করল।
এসএসসি দুর্নীতি মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালত প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৬ সালের যে প্যানেলের ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছিল সেই গোটা প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এসএসসি যাদের নিয়োগ করেছিল তাঁদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে সুদ সহ এতদিনের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বছরে ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে বলে জানান বিচারপতিরা।
তবে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনও এই নিয়ে মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলায় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে আপাতত দুটি শুনানি হয়েছে। সেখানেও প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ শিক্ষক নিয়োগে ভয়াবহ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকার ও এসএসসি-কে তোপ দাগে।
পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়ে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত চাকরি বহাল থাকবে বলে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে। আগামী জুলাই মাসে ফের এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। তবে এরই মধ্যে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের মুচলেকা দিয়ে জানাতে হবে চাকরি বাতিল হলে তাঁরা এই কমাসের বেতন ফিরিয়ে দেবেন।
আরো পড়ুনঃ মাত্র ৭ টাকায় সোনা কিনুন! অক্ষয় তৃতীয়ার বাম্পার অফার, এইভাবে ফায়দা ওঠান
সেই শুনানিতেই মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে তাদের মধ্যে ১৯ হাজার যোগ্য। ফলে প্রকারন্তরে এসএসসি মেনে নিয়েছে যে প্রায় ৭ হাজার অযোগ্য এতদিন চাকরি করছিলেন।
তবে এই ১৯ হাজার যোগ্যদের মধ্যে সকলেই যে সঠিক প্রক্রিয়ায় চাকরি পেয়েছে সেটাও এর আগে জোর দিয়ে বলতে পারেননি এসএসসি চেয়ারম্যান। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা জমা দিতে হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে। আপাতত একটা বিষয় পরিষ্কার সর্বোচ্চ আদালতের হাতেই এখন এই শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের ভবিষ্যৎ।