ভারতীয় রেল এবার বড়সড় সিদ্ধান্তের পথে হাঁটলো। গত ১১ই মার্চ সোমবার রাজ্যসভায় পাস হল রেলওয়ে সংশোধনী বিল ২০২৪। কেন্দ্রের দাবি, রেল পরিষেবাকে আরো আধুনিক এবং স্বচ্ছ করতে এই সংশোধনী আনা হয়েছে।
কিন্তু বিরোধীরা অভিযোগ করছে, এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে রেলকে বেসরকারিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাহলে এই নতুন নিয়মে কী বদলাতে চলেছে? সাধারণ যাত্রীদের উপর এই নিয়মের কী প্রভাব পড়বে? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই আজকের প্রতিবেদনে।
কী রয়েছে নতুন রেলওয়ে বিলে?
নতুন এই বিলে ১৯০৫ এবং ১৯৮৯ সালের রেলওয়ে আইন সংশোধন করা হয়েছে। কেন্দ্র সরকার দাবি করছে, এর ফলে রেল বোর্ডের ক্ষমতা আরো বাড়বে এবং জোনাল রেলওয়েগুলিকে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরো স্বাধীনতা জোরালো হবে।
এছাড়া পরিষেবা খাতে দক্ষতা বাড়বে ও রেল ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে। কিন্তু বিরোধিতা মনে করছে, এর মাধ্যমে রেলের বিভিন্ন বিভাগকে ছোট ছোট কর্পোরেশনে ভাগ করে বেসরকারিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কী বলছে কেন্দ্র সরকার?
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই অভিযোগ খারিজ করে বলেছেন, “রেলকে বেসরকারিকরণ করার কোনরকম প্রশ্ন নেই। বরং ভারতীয় রেলকে আরো আধুনিক করে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বিরোধীরা মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।” তিনি আরো জানিয়েছেন, “১.১৪ লক্ষ শূন্যপদে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হবে। ফলে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।”
তাহলে কি রেল বেসরকারিকরণ হয়ে যাচ্ছে?
কেন্দ্র সরকার সরকারি বা বেসরকারীকরণের কথা কিছু না বললেও, কিছু পরিষেবা এবার বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যেমন ট্রেনে খাবার সরবরাহ, স্টেশন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত কাজ।
বিরোধীরা অভিযোগ করছে, এর মাধ্যমে রেলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলি বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পুরো রেল ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র সরকার।
আরও পড়ুন: তৃতীয় সন্তান হলেই পাওয়া যাবে নগদ ৫০ হাজার টাকা, বড় উদ্যোগ রাজ্যের
বিরোধীদের আপত্তি কেন?
কংগ্রেস সংসদ বিবেক তাঙ্খা বলেছেন, “সরকার রেলের নিরাপত্তা, যাত্রী পরিষেবা, বাজেটের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনরকম উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং দায় সারতে বেসরকারিকরণের দিকে এগোচ্ছে।” তিনি আরো অভিযোগ করেছেন, যাত্রী নিরাপত্তা এবং স্টেশন ভিড় সামলানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি নেওয়া হচ্ছে না।
রেলওয়ে সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক এখনো অব্যাহত। কেন্দ্র সরকার বলছে, এটি শুধুমাত্র পরিষেবা উন্নত করার জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু বিরোধীরা দাবি করছে, এটি পরোক্ষভাবে বেসরকারীকরণের প্রথম ধাপ। আসলে কি ঘটবে সেটা সময়ে বলা যাবে।