পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হল স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প। ২০১৬ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চিকিৎসার খরচ বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন। তবে সাম্প্রতিককালে প্রকল্পে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ ও অনিয়মের কারণে কড়া নির্দেশিকা জারি হয়েছে, যাতে এই প্রকল্পের সুবিধা সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছায়।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি পরিবার বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্য চিকিৎসা সুবিধা পেয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ব্যবহার করে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও সম্পূর্ণ বিনামূল্য চিকিৎসার সুবিধা গ্রহণ করা যায়। এই প্রকল্পটি বিশেষত নিম্নবিত্ত, দুঃস্থ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির জন্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে সাম্প্রতিক সমস্যা
সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রকল্প নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই সমস্ত সমস্যাগুলি হল-
- স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ব্যবহারকারীদের অনেক সময় ভুল তথ্য দেওয়া হয়, যার কারণে তারা বেসরকারি হাসপাতালে এই কার্ডের পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছে না।
- সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও প্রকল্পের সঠিক প্রয়োগ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
- আর জি কর হাসপাতাল কাণ্ডের পর রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে প্রকল্পের অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগ ও সামনে এসেছে।
সরকারের নির্দেশিকা
এই সমস্ত পরিস্থিতিগুলো মোকাবেলা করতে রাজ্য সরকার কিছু নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেগুলি হল-
- প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা সম্পর্কিত একটি বোর্ড টাঙানো হবে। এতে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ব্যবহারকারীরা তাদের প্রাপ্য সুবিধাগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা গ্রহণ করতে পারবে।
- যদি কোন ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য সাথী কার্ডধারীদের প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল রাজ্যের নিম্নবিত্ত, দুঃস্থ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সাহায্য প্রদান করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার চায় চিকিৎসার খরচের কারণে যাতে কোন সাধারণ মানুষের মৃত্যু না হয় এবং তারা স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।
আরও পড়ুন: সরকারের এই প্রকল্পে মাত্র ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করুন, প্রতি মাসে ৫০০০০ টাকার বেশি পেনশন পাবেন
সুবিধাগুলি কার্যকর করতে সরকারের উদ্যোগ
রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং এই সুবিধাগুলি কার্যকর করার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেগুলি হল-
- স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধাগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ডিজিটাল এবং ফিজিক্যাল প্রচার বাড়ানো হয়েছে,
- প্রতিটি হাসপাতালে পরিষেবার উপর কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে, যাতে কোন নাগরিক এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প এক কথায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের জন্য এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। তবে এই প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সরকার এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছে। আশা করা যায় এই প্রকল্পে আর কোন জালিয়াতি হবে না এবং প্রকল্পটির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।