এই খবরটাকে ভাল এবং মন্দ দুটোই একসঙ্গে বলা যেতে পারে। মন্দ এই অর্থে যে সম্ভাবনা জাগিয়েও লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য অষ্টম পে কমিশনের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হয়নি। আর ভাল হল পে কমিশনের মাধ্যমে সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির হিসেবটাই অন্যরকম হয়ে যেতে পারে। যার ফলে নিচুতলার লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী বিপুলভাবে উপকৃত হবেন।
গত কয়েক মাস ধরে অষ্টম পে কমিশনের (8th Pay Commission) জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সরকারি কর্মীরা। মাসখানেক আগে সরকারের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছিল, লোকসভা ভোটের আগেই হয়ত অষ্টম পে কমিশনের কথা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আচমকা এই দেশের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত হতাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, অষ্টম পে কমিশন হচ্ছে না। সম্ভবত পে কমিশন ব্যাপারটাই তুলে দিতে চলেছে মোদি সরকার। বদলে আসবে বিকল্প এক ব্যবস্থা।
মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই যোজনা কমিশন তুলে দেয়। এবার সম্ভবত তারা আরেক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পে কমিশন, যাদের কাজ ছিল ১০ বছর অন্তর সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো, সুযোগ সুবিধা, চাকরির শর্ত ইত্যাদি পর্যালোচনা করা এবং নতুন বেতন হার নির্ধারণ করা সেটাও তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে।
সরকারের একটি মহল যখন পে কমিশন তুলে দেওয়ার সম্ভাবনার পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তখন অপর অংশটির মতে খুব শীঘ্রই অষ্টম পে কমিশনের কথা ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র। লোকসভা নির্বাচন শেষ হলেই এই ঘোষণা সামনে আসবে বলে তাঁরা আশাবাদী। সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রককে চিঠিও লিখেছে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সুপারভাইজার অ্যাসোসিয়েশন (IRTSA)।
আরো পড়ুনঃ দাম কমলো পেট্রোলের! এইসমস্ত জায়গায় ১০০ টাকার নীচে, কোলকাতায় দাম কত?
কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্তদের বেতন কাঠামো কী হবে, তাঁদের কোন ভাতা কতটা দেওয়া উচিৎ, কোন হিসেবে পদোন্নতি হবে এই সব কিছুই নির্ধারণ করে পে কমিশন। এই পে কমিশন একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা। ফলে আর পাঁচটা সাধারণ রিপোর্টের থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে পে-কমিশন যে সুপারিশ করে থাকে তার গুরুত্ব অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র মারফত খবর, অষ্টম পে কমিশন যে ভোট মিটলে যে কোনও সময় ঘোষণা করা হতে পারে। এর হাত ধরে আগামী দিনে বিপুল বেতন বেড়ে যেতে পারে সরকারি কর্মীদের।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সর্বনিম্ন বেসিক পে মাসে ১৮,০০০ টাকা। একটি সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের এই সর্বনিম্ন বেসিক পে বেড়ে অন্ততপক্ষে ২৬,০০০ টাকা হতে পারে। উল্লেখ্য একজন কর্মীর মোট বেতন বেসিক পে’র উপর ভিত্তি করে আরও নানান ভাতা জুড়ে শেষ পর্যন্ত অনেকটাই বেশি হয়। সেক্ষেত্রে বেসিক পে যদি এক ধাক্কায় ৮০০০ টাকা বেড়ে যায় তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মোট বেতন যে অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে গ্রেড-এ ও এক্সিকিউটিভ পর্যায়ের সরকারি কর্মীদের বেতন অষ্টম পে কমিশনের হাত ধরে বিপুলভাবে বাড়তে চলেছে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সপ্তম পে কমিশনের হাত ধরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রায় ২৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিল। অথচ এই পে কমিশনের নোটিফিকেশন জারি হয়েছিল ২০১৩ সালে যা বাস্তবায়িত হয় ২০১৬ সালে। এর পরবর্তী প্রক্রিয়া মিটিয়ে বেতন বৃদ্ধি পেতে অনেকটাই সময় লেগে যায়।
আরো পড়ুনঃ ১৪ জুনের পর পুরোনো আধার কার্ড সব বাতিল হবে? এই বিষয়ে কী বলছে আধার দফতর?
এদিকে ভিন্ন মত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার পে কমিশন তুলে দিলে যে বিষয়গুলি ঘটবে-
১/৪: কেন্দ্রীয় সরকার পে কমিশন তুলে দিলে তাদের অবশ্যই বিকল্প কোনও পথে হাঁটতে হবে। কারণ মুদ্রাস্ফীতি সহ নানান কারণে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো পরিবর্তিত হবে, এটাই কাম্য বিষয়। ফলে সেইটা কীভাবে নির্ধারিত হবে তা নিয়ে ভোট প্রক্রিয়া শুরুর আগে নতুন এক দিশা দিয়েছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী।
২/৪: অর্থ প্রতিমন্ত্রী লোকসভায় দাঁড়িয়ে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির জন্য এবার পারফরমেন্সের বিষয়টি সর্বাধিক বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ পারফরম্যান্স লিঙ্কড ইনক্রিমেন্ট ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে দেশে। এই নিয়ম মূলত নিচুতলার কর্মীদের জন্য নিয়ে আসা হবে। আর উচ্চস্তরীয় আধিকারিকদের ক্ষেত্রে প্রতি তিন বছর অন্তর বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হতে পারে।
৩/৪: পারফরম্যান্স লিঙ্কড ইনক্রিমেন্ট ব্যবস্থার জন্য ওয়ালেস রুডেল আইকারয়েড-এর নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আইক্রয়েড ফর্মুলা অনুসরণ করে এবার নির্দিষ্ট সময় অন্তর কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ভাতা ও বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি ঘটানো হবে। ইতিমধ্যে এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।
৪/৪: পাশাপাশি মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, মুদ্রাস্ফীতির সাম্প্রতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য মহার্ঘ্য ভাতা বা ডিএ যথেষ্ট কার্যকরী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য।